34.9 C
Dhaka
Tuesday, June 24, 2025

ভারতের কূটনৈতিক মাথাব্যথার কারণ শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনাকে অনেকে গত এক যুগ ধরে ‘আয়রন লেডি’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করা শেখ হাসিনা অস্থায়ীভাবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

সাড়ে ১৫ বছর যাবত দোর্দণ্ড প্রতাপে ক্ষমতায় টিকে থাকা একজন প্রধানমন্ত্রী এভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন সেটি অনেক ধারণাই করতে পারেননি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্ষমতাচ্যুত হবার পর কোনো ব্যক্তি এভাবে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হননি।

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনে উৎখাত হওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান ভারতে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের জন্য এখন কূটনৈতিক মাথাব্যথা হয়ে উঠেছেন হাসিনা৷

১৫ বছরের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধীদের দমন-পীড়নের প্রতিবাদে এ গণআন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের দাবি, শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক৷

কিন্তু ৭৬ বছর বয়সি হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে হলে দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য প্রতিবেশীদের কাছে ভারতের অবস্থান ক্ষুণ্ণ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে৷ বিশেষ করে, দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারে যখন চীনের সঙ্গে দ্বৈরথ চলছে, এমন একটা সময়ে এই উদাহরণ অনেকে ভালো দৃষ্টিতে নাও নিতে পারেন৷

আরও পড়ুনঃ  ‘তোর বাপেগরে জানাইস কে পিটাইছে’

বিরোধ সমাধান বিষয়ক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের টমাস কিন বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ভারত স্পষ্টতই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায় না৷ এর ফলে নয়া দিল্লির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকা এ অঞ্চলের অন্যান্য নেতাদের কাছে একটা বার্তা পাঠানো হবে… যে শেষ পর্যন্ত, ভারত আপনাকে রক্ষা করবে না৷ বিষয়টা ভারতের জন্য খুব ইতিবাচক হবে না৷”

গত বছর মালদ্বীপে এমন এক রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন, যিনি জেতার পরপরই নয়া দিল্লির বদলে কৌশলগতভাবে বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন৷

হাসিনার পতনের ফলে ভারত এই অঞ্চলে তার ঘনিষ্ঠতম মিত্রকে হারিয়েছে৷

শেখ হাসিনার অধীনে যারা নির্যাতিত হয়েছেন, তারা তার সরকারের সংঘটিত নির্যাতনের জন্য ভারতকেই অনেকাংশে দায়ী করেন৷ ভারতের হিন্দু-জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কূটনীতিও সেই বৈরিতা ছড়াতে ভূমিকা রেখেছে৷

৮৪ বছর বয়সি নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদি৷ বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রক্ষা করার জন্য ইউনূসের প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ করেছেন মোদি৷

আরও পড়ুনঃ  ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র গতিপথ কোন দিকে, আঘাত কখন

ভারতের স্বাধীনতা দিবসে সপ্তদশ শতকের লাল কেল্লা থেকে দেয়া ভাষণে মোদি বাংলাদেশি হিন্দুদের বিপদে পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং পরবর্তীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপেও বিষয়টি উত্থাপন করেন৷

শেখ হাসিনার পতনের পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং মন্দিরের ওপর কিছু হামলার ঘটনা ঘটে৷ এসব ঘটনার নিন্দাও জানানো হয়েছে বাংলাদেশের আন্দোলনকারী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে৷ কিন্তু ভারতের সরকার সমর্থক বেশকিছু সংবাদমাধ্যমে এসব ঘটনার অতিরঞ্জিত বিবরণ দেশটিতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা ছড়িয়েছে৷

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারত হাসিনাকে সমর্থন করে ‘তার সব ফল এক ঝুড়িতে রেখে দিয়েছে’ এবং পরিস্থিতি কীভাবে বদলাতে হবে সেটা বুঝতে পারেনি। হাসিনার আমলে গ্রেফতার হওয়া হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মীদের একজন মির্জা ফখরুল এএফপিকে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ভারতের সাথে ভালো সম্পর্ক চায়, কিন্তু সেটা নিজেদের স্বার্থের বিনিময়ে নয়৷

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতের মনোভাব এই আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য অনুকূল নয়৷

এমন অনাস্থা এবং অবিশ্বাসের পরিস্থিতিতেই আগস্ট মাসে ভয়াবহ বন্যা আক্রান্ত হয় দুই দেশই৷ অনেক বাংলাদেশির পক্ষ থেকে ভারতকে এই বন্যার জন্য দায়ী করা হয়৷

আরও পড়ুনঃ  দুপুরের মধ্যে ঝড়ের শঙ্কা, ৫ অঞ্চলে সতর্কসংকেত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এখনও প্রকাশ্যে নয়া দিল্লির কাছে শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেনি৷ কিন্তু কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করার কারণে নয়া দিল্লির কাছে একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে অবস্থান করা হাসিনার অন্য কোনো দেশে যাওয়াটাও কঠিন হয়ে পড়েছে৷

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৩ সালে একটি দ্বিপাক্ষিক প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়েছিল৷ এর অধীনে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার সুযোগ রয়েছে৷

তবে চুক্তির একটি ধারায় অপরাধ ‘রাজনৈতিক চরিত্রের’ হলে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সুযোগও দেয়া হয়েছে দুই দেশকে৷

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী এএফপিকে বলেন, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চাপ দেওয়ার চেয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রক্ষা বাংলাদেশের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷

তিনি বলেন, ‘যে কোনো বুদ্ধিমান সরকার বুঝতে পারবে যে হাসিনার ভারতে থাকার বিষয়টিকে ইস্যুতে পরিণত করা তাদের জন্য কোনো সুবিধা তৈরি করবে না৷’

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ