28 C
Dhaka
Thursday, June 19, 2025

‘ছাত্রলীগের একজন বলল মরছে কিনা দেখতো, আরেকজন মাথায় পানি ঢেলে বলে নাটক করছে’

‘ভাই আমাকে যেতে দিন, আমারে যেতে দিন। ফেরদৌসকে হাসপাতালে নিতে হবে, ওর অনেকগুলো গুলি লাগছে’ এভাবেই ছাত্রলীগের হাতে মার খেতে খেতে চিৎকার দিচ্ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মারধরের শিকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী মাহমুদ।

গত ১৬ জুলাই সদরঘাটে গুলিবিদ্ধ বন্ধু ফেরদৌসকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার সময় চাঁনখারপুলে রিকশা থেকে নামিয়ে মাহমুদকে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

মাহমুদ বলেন, যখন গুলিবিদ্ধ ফেরদৌসকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলে তখন রক্তাক্ত ফেরদৌসের শরীর কোলে নিয়ে সিএনজিতে উঠি। কিছুক্ষণ পর সিএনজি ড্রাইভার রাস্তা বন্ধ থাকায় যেতে না পারায় আমাদের নামিয়ে দিয়ে একটা রিকশায় তুলে দেন।

আমি ফেরদৌসের কিছু ভিডিও করার চেষ্টা করি। একটা সময় রিকশা চাঁনখারপুল পৌঁছালে ছাত্রলীগের কিছু লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। তখন মাথায় একটাই ব্যাপার কাজ করছিল যে বন্ধুকে বাঁচাতে হবে, যা হওয়ার হবে। আমি ভাবছিলাম যেহেতু গুলিবিদ্ধ একজনকে হাসপাতালে নিচ্ছি আমাকে তো যেতে দিবে। রিকশা চাঁনখারপুল আসলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে নামিয়ে দুরে নিয়ে যায়। আর তখন তাকিয়ে দেখছিলাম ফেরদৌসের মাথা কাত হয়ে রিকশা থেকে পড়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  শাহবাগ থানায় ঢুকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করলেন ঢাবির ৪ শিক্ষক

মাহমুদ বলেন, কয়েকজন এসে আমাকে ইচ্ছামতো মারতে শুরু করে। কেউ থাপ্পড়, কেউ লাঠি, কেউ স্টাম্প দিয়ে আঘাত করতে থাকে। আমার পায়ে রড দিয়ে মারে, তখন আর কিছু করতে পারছিলাম না।

‘একটু পর তারা আমাকে বলতে থাকে তুই আন্দোলনকারী। কিন্তু আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এই পরিচয় দেইনি। আমার কাছে আইডি কার্ডও সাথে ছিল এসব দেখলে তারা আমাকে আরও বেশি মারতো, হয়ত মেরে ফেলতো। কিন্তু তারা এসব দেখার প্রয়োজন মনে করেনি।’

মাহামুদকে তখন তারা মারতে মারতে বলছিল তুই দৌড়া। কিন্তু দৌড়ালে যদি তারা আরও বেশি মাথায় আঘাত করে তাই সে তখন দৌড়ানি। তিনি বলেন, তবে একটু হেঁটে এগিয়ে যেতে শুরু করলে পিছন থেকে একজন আমার মাথায় জোরে এমনভাবে আঘাত করে যে আমি তিন চার হাত দুরে গিয়ে পড়ি। আমার মনে হচ্ছিলো আমি আর জীবিত ফিরে যেতে পারবো না।

আরও পড়ুনঃ  আমেরিকায় বসে তুমি বেশি বুইঝো না, সোহেল তাজকে শেখ হাসিনা

মাহমুদ বলেন, এসময় আমি অজ্ঞান এর মতো শুয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে রাখি। কিন্তু তখনও জ্ঞান ছিল। মনে মনে বলছিলাম মারতে থাক কত মারবি। আমি এভাবেই থাকবো। হঠাৎ করে তারা মারা বন্ধ করে দেয়। একদল মারা বন্ধ করলে আরেকটি দল আসে তাদের। কিছুক্ষণ তারা মেরে শেষ করলে আরেকটি দল আসে। আমি শুধু মারধরের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আমার সব শার্ট প্যান্ট ছিড়ে গিয়েছে ততক্ষণে।

‘মারা বন্ধ হলে আমি যখন অজ্ঞান এর মত হয়ে পড়ে ছিলাম তখন ছাত্রলীগ একজন আরেকজনকে বলে এই মারা গেছে কিনা দেখতো। এরপর একজন এসে আমার মাথায় পানি ঢালে আর বলে, এই ছেলে নাটক করছে। এরপর তারা আমাকে আবার মারে। ঠিক ওই সময় ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগকে ধাওয়া দিলে তারা অন্যদিকে চলে যায়। তখন হলের ভাইয়েরা এসে বলে একে হলে নিয়ে যাও।’

আরও পড়ুনঃ  হারুন ছাড়াও ডিএমপির আরও ৫ কর্মকর্তাকে বদলি

তখন আমার মনে একটু শান্তি আসে যে হলে অন্তত সাধারণ শিক্ষার্থীরা থাকবে আমার কিছু হবে না। আবার হলে আগে থেকে আমার কিছু পরিচিত ছিল। তারা আমাকে তুলে হলে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি খেয়াল করি আমার পা কাজ করতেছেনা। কিন্তু আমার মনবল শক্ত ছিল। আমি তাদের ভাইদের আন্দোলনের দিকে যেতে বলছিলাম।

তিনি আরও বলেন, হলে অনেকক্ষণ থাকার সময় ভাইয়েরা আমার খোঁজ-খবর নিতে থাকে। কিন্তু আমার তখন হাসপাতালে যাওয়ার দরকার ছিল। তাই তারা আমাকে বের করে রিকশায় তুলে দেয়। এরপর ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে আসলে আমার পরিচিতরা আমাকে রিসিভ করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় নিয়ে যায়। কারণ সেখানে তখন চারদিকে পুলিশ গ্রেফতার করার জন্য ঘুরছিলো।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ