ঢাকার পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ১৬ বছর পর অন্তর্বর্তী সরকার যে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করেছে, সেই কমিশন তাদের তদন্তে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে।
তবে বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে দুটি মামলায় বিচার ইতিমধ্যে হয়েছে। ঘটনার বিচার হওয়ার পর এখন তদন্ত কমিশন আসলে কী করতে চাইছে, তাদের এখতিয়ার কতটা-এ সব প্রশ্ন সামনে আসছে।
এই তদন্ত কমিশন তাদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
তালিকায় শেখ হাসিনার উপদেষ্টাসহ তার সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও কয়েকজন সাংবাদিকের নাম রয়েছে। তবে এই তালিকায় নাম থাকা সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের অনেকেই পলাতক বা নিরুদ্দেশ আছেন।
বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের সাত দিনের মধ্যে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তাদের সময়সূচি ফোন, ই-মেইল বা চিঠির মাধ্যমে কমিশনকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, সাত দিনের মধ্যে তারা সাক্ষ্য দেওয়ার সময়সূচি জানাতে না পারলে কী হবে?
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এ কমিশনের ডাকে কেউ নিজ থেকে সাড়া না দিলে তাদের বাধ্য করার কোনো সুযোগ নেই এবং কমিশনের সেই এখতিয়ারও নেই।
কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপনে অবশ্য বলা হয়েছে যে কমিশন সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। কিন্তু তলবে সাড়া না দিলে করণীয় কী হবে, তা নিয়ে ওই প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা নেই।
তবে কমিশন তার প্রথম বিজ্ঞ্তিতে বলেছে “সাক্ষীগণের অসহযোগিতার ক্ষেত্রে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন আইন অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে”।
কিন্তু সেই ব্যবস্থা কী হবে, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য কমিশন সংশ্লিষ্ট কারও কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ডিসেম্বরে সরকারের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমিশনস অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬ এর অধীনে মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে (অবসরপ্রাপ্ত) সভাপতি করে ‘পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের’ বিষয়ে ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়েছিলো।
কমিশনের একজন সদস্য মো. শরীফুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত এমন মর্মান্তিক ঘটনা কীভাবে ঘটলো এবং তাতে আরও কোনো ব্যক্তি ও গোষ্ঠী জড়িত ছিল কি-না তা দেখার চেষ্টা করা এবং সেটিকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসার কাজ করছে কমিশন।
এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালে। বিদ্রোহের ঘটনার পর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি রাখা হয়েছে।