28.6 C
Dhaka
Friday, June 20, 2025

আফগানিস্তান-রুশ সম্পর্কের নতুন মোড়

১৭ এপ্রিল ২০২৫, কাবুল, আফগানিস্তান—আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুততাকির সঙ্গে বৈঠক করছেন আফগানিস্তানে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনভ

দীর্ঘ দুই দশক পর তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিল রাশিয়া। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট এ সংক্রান্ত রায় দেয়, যার মাধ্যমে তালেবানের সঙ্গে রুশ নাগরিকদের যোগাযোগকে আর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে না। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত শুধু দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, বরং আফগানিস্তান ঘিরে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যেও বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একইসঙ্গে এটি তালেবান সরকারের জন্য এক বড় কূটনৈতিক স্বীকৃতিও বটে, যারা ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সুযোগে আকস্মিকভাবে ক্ষমতা দখল করে নেয়।

তালেবানের জন্য কূটনৈতিক বিজয়
তালেবানকে এখনো বিশ্বের কোনো বড় পরাশক্তি সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারীদের শিক্ষা নিষিদ্ধকরণ এবং গণতান্ত্রিক শূন্যতার কারণে তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে অনাগ্রহী। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্ত তালেবান নেতৃত্বের জন্য একরকম বৈধতার পথে অগ্রগামী পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুনঃ  জামায়াতের নিষেধাজ্ঞা ও শোক দিবসের ছুটির বিষয়ে যা জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “মাদক ও সন্ত্রাসবাদ দমনসহ আফগানিস্তানের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব খাতে সহযোগিতা গড়ে তুলতে আগ্রহী রাশিয়া।”

বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্ভাবনার দরজা খুলছে
রাশিয়ার সিদ্ধান্তের পর এখন তালেবানের সঙ্গে ব্যবসায়িক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ আরও সরাসরি এবং বৈধভাবে চালানো সম্ভব হবে। মস্কো আফগানিস্তানে বিনিয়োগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জ্বালানি সরবরাহ এবং কৃষি খাতে সহযোগিতার কথা ভাবছে বলে রুশ সংবাদমাধ্যমে ইঙ্গিত মিলেছে।

তালেবান নেতৃত্বও বিভিন্ন সময় রাশিয়ায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। কিন্তু এতদিন তারা রুশ আইনের চোখে সন্ত্রাসী ছিল। এখন সেই বাধা দূর হওয়ায় সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

আরও পড়ুনঃ  ১৫ লাখ টাকার একটি খাসি, কেড়ে নিল লাকীর হাসি

রাশিয়া ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি বড় অভিন্ন স্বার্থ হলো-‘ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশ’ বা আইএস-কে নামে পরিচিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মোকাবিলা। এই গোষ্ঠী আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে যেমন ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে, তেমনি ২০২৪ সালের মার্চ মাসে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উপকণ্ঠে ‘ক্রোকাস সিটি হল’-এ চালানো ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার দায়ও স্বীকার করেছে।

এই বাস্তবতায় রাশিয়ার জন্য তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং নিরাপত্তা কৌশলের অংশও।

রক্তাক্ত অতীত, বাস্তবসম্মত বর্তমান
রাশিয়া ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক ইতিহাসে জড়িয়ে আছে রক্তের দাগে। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সামরিক হস্তক্ষেপ করে, যা এক দশকের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রূপ নেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো মুজাহিদিনদের সহায়তা দেয়। এই লড়াইয়ে জন্ম নেয় তালেবান, যারা পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে এবং ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন অভিযানে উৎখাত হয়।

আরও পড়ুনঃ  বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলাম না: মাহফুজ আলম

দীর্ঘ ইতিহাসের সেই সংঘাতময় অধ্যায়ের পর এখন রাশিয়া ও তালেবান মুখোমুখি নয়, বরং কৌশলগত মিত্রতার পথে হাঁটছে।

রাশিয়ার মতো মধ্য এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ-কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও উজবেকিস্তান ইতিমধ্যেই তালেবানকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, পাকিস্তান ও ভারতও তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ চালু রেখেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার সিদ্ধান্ত শুধু একটি দেশের অভ্যন্তরীণ নীতির বিষয় নয়, বরং এটি মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে এক নতুন কূটনৈতিক সমীকরণের সূচনা।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ