27 C
Dhaka
Tuesday, March 25, 2025

কথা বলছে’ গাছ, ভেসে আসছে নারী কণ্ঠের আর্তনাদ!

গাছ মানুষের সঙ্গে কথা বলছে, দিচ্ছে প্রশ্নের উত্তর। কান পাতলে গাছের ভেতর থেকে ভেসে আসছে আর্তনাদ করা নারী কণ্ঠ, দাবি স্থানীয়দের। এ খবরে দলে দলে মানুষ আসছেন, আর কান পাতছেন গাছের কাণ্ডে।

গর্জিনা গ্রামে গাছের ‘কথা বলার’ খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের জেলার উৎসুক জনতা ভিড় করতে শুরু করে এবং কান পেতে নানান শব্দ শোনার দাবি করে। ছবি: সময় সংবাদ
গর্জিনা গ্রামে গাছের ‘কথা বলার’ খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের জেলার উৎসুক জনতা ভিড় করতে শুরু করে এবং কান পেতে নানান শব্দ শোনার দাবি করে। ছবি: সময় সংবাদ
জয়ন্ত শিরালী

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর ইউনিয়নের গর্জিনা গ্রামে ঘটেছে এমন ঘটনা। ‘কথা বলা’ গাছ দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে শতাধিক মানুষ।

স্থানীয়দের দাবি, গর্জিনা গ্রামে সৌদি প্রবাসী সবুর মিয়ার একটি গাছের বাগান আছে। গত ১৪ জুন ওই বাগানের একটি লম্বু গাছ কাটতে যায় জুয়েল মোল্লার ছেলে নিরবসহ (১০) কয়েকজন শিশু। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে গাছটি নাকি কথা বলে ওঠে এবং কেঁদে ওঠে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে গাছের কথা বলার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে উপজেলার রাঘদি ইউনিয়নের গর্জিনা গ্রামে। এরপর থেকে এ গাছ দেখার আশায় সেখানে ভিড় বাড়ছে অসংখ্য মানুষ।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মংডুর বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার আহ্বান

এ সময় শিশুরা ভয় পেয়ে বাড়ি ফিরে যায়। পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানার পর গাছটি দেখতে যায়। তারা গাছের গায়ে কান পেতে আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। গাছের গায়ে গোবর লেপার কারণে এক নারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় রাঘদি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সাদ্দাম হোসেন, একই গ্রামের লিয়াকত হোসেন, টেকেরহাটের সোহেল মাতুব্বর, গর্জিনা গ্রামের ফরিদ মোল্লাসহ অনেকেই গাছের গায়ে কান পেতে কথা শোনার চেষ্টা করেছেন। এই তালিকায় রয়েছে শিশুরাও। যদিও অনেক দর্শনার্থী গাছের কথা শুনতে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

গাছে কান পাতা কয়েকজন জানান, কানপাতার পর ফিসফিস করে আওয়াজ হচ্ছে। এমনকি ‘সালাম’ দিলে ‘হু’ শব্দ করছে। কিন্তু কোনো কথা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু আশপাশের গাছে কান পাতলেও সেসব গাছে কোনো শব্দ হচ্ছে না।

আরও পড়ুনঃ  শেখ হাসিনার জন্য ভারত ঠিক কতদূর যেতে রাজি?

স্থানীয় এক শিক্ষার্থীর দাবি, গাছে কথা বলার খবর পেয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে তারা এখানে এসেছেন। কান পাতার পর একটা মেয়ের কণ্ঠ শুনতে পান তারা। যেন মেয়েটি আর্তনাদ করছে, এমন শব্দ শুনেছেন বলে ওই শিক্ষার্থী দাবি করেন।

কেউ কেউ বলছেন, শব্দ শুনে মনে হচ্ছে ক্লান্ত শরীরের নিয়ে কোনো রোগী গলা দিয়ে যেমন শব্দ করে, সেরকম শব্দ হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঘদী ইউপি চেয়ারম্যান শাহিদুর রহমান টুটুল বলেন, ‘ওই গাছের কথা শুনতে শত শত লোক ভিড় জমাচ্ছে। আমি মনে করি যারা গাছের কথা শুনেছে তাদের কথা বিশ্বাস করা যায় না। কিছু লোক অতি উৎসাহী হয়ে মানুষকে আলৌকিক ঘটনা বিশ্বাস করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে।’

তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা এটিকে নিছক কুসংস্কার বলছেন। আর মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটি পুরোটাই মনস্তাত্ত্বিক, বাস্তব নয়।

আরও পড়ুনঃ  এক ফ্যাসিস্টের পতন ঘটিয়েছি, অন্য ফ্যাসিস্টকে বসানোর জন্য নয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাহমিনা বেগম বলেন, ‘গাছ আসলে কথা বলতে পারে না। বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোনো ভিত্তি নেই। গাছের শরীরে কান পাতলে শব্দ শোনা যেতে পারে। বাতাসে যখন একটা বড় গাছ নড়াচড়া করে, তখন কম্পন হতে পারে। তখন শব্দের সৃষ্টি হতে পারে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুসরাত শারমিন বলেন, ‘এমনটা হতে পারে- মানুষগুলো প্রথম যখন গাছে কান পেতেছিল, তখন আশপাশের কোনো শব্দকে তার অবচেতন গাছের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছে। এরপর সে ভ্রান্ত ধারণা বিশ্বাস করে আরও যারা কান পাতছে তাদেরও কানে এক ধরনের ভ্রম বা বিভ্রাট তৈরি হচ্ছে।’

গাছটির নাম আফ্রিকান মেহগনি। স্থানীয়ভাবে এটিকে লম্বু গাছ বলেও ডাকা হয়।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ