24 C
Dhaka
Thursday, February 20, 2025

ঘুষের টাকা নেন গুনে, কম হলে দেন ফেরত

ঘুষের টাকা গুনে গুনে নেন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা শাহদাত হোসেন। কথামতো ঘুষের টাকা না পেলে তা নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। অনেক সময় উপকারভোগীদের মুখে টাকা ছুড়ে মারেন তিনি। ঘুষের টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও কালবেলার হাতে এসেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, নিজ অফিসে বসে শাহদাত হোসেন ঘুষের টাকা গুনে গুনে নিচ্ছেন। টাকার পরিমাণ কম হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেন। যদিও ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন শাহদাত।

এদিকে ঘুষ বাণিজ্য, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ঈদগাঁও উপজেলার প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  আত্মগোপনে থাকা ছাত্র*লীগের কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী বলেন, জনস্বাস্থ্য অফিস থেকে তাকে একটি টিউবওয়েল বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু টিউবওয়েল পেতে সরকারি ফি-র পাশাপাশি শাহদাৎ ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। দেন-দরবারের একপর্যায়ে তাকে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হয়। কিন্তু আর্থিক সংকটের জন্য তাকে ঘুষের পুরো টাকা দিতে না পারায় আমার সঙ্গে তর্ক জড়ান। পরে টাকাগুলো গুনে দেখেন। কম হওয়ায় আমাকে বকাঝকা করে টাকা ফেরত দিতে চান। পরে বাধ্য হয়ে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি।

আবুল কাশেম নামের অপর এক ভুক্তভোগী বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে আমাকে ৮০০ ফুট গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়। মিস্ত্রিকে সঙ্গে নিয়ে শাহদাত আমাকে বলেন, সরকারের দেওয়া টিউবওয়েল আরও দুইশ ফুট গভীর করলে পানি ভালো আসবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমাকে কিনে দিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  ভারতে পালানোর সময় ইডেন কলেজ ছাত্র*লীগের নেত্রী সুস্মিতা গ্রেপ্তার

তার কথা মতো আমি সব কিনে দেই। কিন্তু তারা কাজ না করে আমার সব জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আমার প্রায় ৬৫ হাজার টাকা ক্ষতি করেছে তারা। শাহদাতকে বললে, তিনি মিস্ত্রির ওপর দায় চাপিয়ে এড়িয়ে যান।

শুধু ঘুষ বাণিজ্য নয়, ঈদগাঁওতে যোগদানের পর থেকে সরকারি টিউবওয়েল বাণিজ্য, ঠিকাদারদের জিম্মি করে টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে শাহদাতের বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত শাহদাত হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারও কাছে থেকে ঘুষ আদায় করিনি। আমি যদি কোনো অপরাধ করে থাকি তবে আমার সিনিয়র অফিসার দেখবে। টিউবওয়েল তালিকা জনপ্রতিনিধিরা দিয়ে থাকেন। যারা ঘুষের কথা বলছে তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

আরও পড়ুনঃ  এক পুলিশ আরেক পুলিশকে গুলি করল কেন? যা জানা যাচ্ছে

ঈদগাঁও উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মাহামুদুল হাসান বলেন, আমি কখনও অনিয়মের সঙ্গে কিংবা অনৈতিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নই। কেন যে আমাকে বহিষ্কার করেছে তা আমার বোধগম্য নয়। অথচ আমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এ কারণে তাদের বিলও আটকে আছে।

তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায় করার কোনো সুযোগ নেই। এ সংক্রান্ত একটি গুণ বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। তারপরও শাহদাত যা করছে তা অপরাধ।

জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অফিসে বসে টাকা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ