কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বাড়িতে আসছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শপথ গ্রহণের দুদিন পরই এ সফর করছেন তিনি। এ উপলক্ষে আবু সাঈদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য হচ্ছে নতুন রাস্তা।
জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার আগমনকে ঘিরে গোটা উপজেলা সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছে। কাজ করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এ উপলক্ষে শুক্রবার বাবনপুর গ্রামে আবু সাঈদের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা তৈরির কাজ করেন শ্রমিকরা।
উপজেলা এলজিইডি অফিসের তত্ত্বাবধানে ইট দিয়ে রাস্তাটি তৈরি করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক শ্রমিক বিকেল থেকে রাস্তা খুড়ে ইট দিয়ে রাস্তা বানাচ্ছেন। আবু সাঈদের বাড়ির সামনে থেকে আঙিনা পর্যন্ত খোড়া ও ইট বসানোর কাজ চলছে। এ তথ্য জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী মশিউর রহমান।
আরও পড়ুনঃ শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তারের দাবি
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, দীর্ঘ সময় আটকে থাকা মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান ও ভাতিজা আজমেরী ওসমান এমনটি উল্লেখ করে এদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারে আয়োজিত ত্বকীসহ নারায়ণগঞ্জের সব হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এই সময় ওসমান পরিবারের সদস্যদের হাতে হত্যার শিকার হওয়া ত্বকী ছাড়াও আরও চারটি পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় রফিউর রাব্বি বলেন, তিনদিন আগে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। এখন পর্যন্ত পরবর্তী কোনো সরকার গঠিত হয় নাই। বলতে গেলে এই তিনদিন শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি আছেন, সরকারবিহীন একটা পরিস্থিতি চলছে। যার ফলে বিভিন্ন জায়গায় অরাজকতা আমরা লক্ষ্য করছি। বৃহৎ একটি পরিবর্তনের পরে বিভিন্ন দেশে দেশে হঠাৎ করে যেভাবে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেটি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুদিন সময় লাগে। ব্যাপারটিকে আমরা সেভাবে দেখতে চাই।
নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার জগদ্দল পাথরের মতো শহরবাসীর ঘাড়ে চেপে বসেছিল উল্লেখ করে রাব্বি বলেন, এই পরিবারটাকে নৃশংস সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সহযোগিতা করেছে প্রশাসন ও সরকার। এই ওসমান পরিবার তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে পরিবহন, হাট, ঘাট থেকে শুরু করে ট্রাক স্ট্যান্ড, বালুমহাল, পাথর ইত্যাদি দখল করেছে। বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দখল করেছে তারা।
এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে তারা কোনো নির্বাচন হতে দেয়নি, লুটপাট করেছে। মাদকের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে ছিল। এর ভাগিদার হয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার বিভিন্ন সময় যে ভূমিকা রেখেছে তা জনগণের বিপক্ষে গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেই আজমেরী ওসমান ত্বকীসহ অনেককে খুন করেছে। সেই আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তার তো দূরের কথা বিভিন্নভাবে পুলিশ-প্রশাসন তাকে সহযোগিতা করেছে। শামীম ওসমান পরিবারসহ এখনও পালাতে পারেনি বলে জেনেছি। তাদের যেন পালাতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
নাহলে পরবর্তী সমস্ত দায়দায়িত্ব প্রশাসনকে নিতে হবে। কারণ যে শেখ হাসিনা অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের খুনি হিসেবে পরিচিত, চিহ্নিত, তাকে আপনারা ইতোমধ্যে দেশ থেকে পালানোর সুযোগ দিয়ে অপরাধ ও জঘন্য অন্যায় করেছেন। তাকে শাস্তির আওতায় আনা থেকে আপনারা বিরত রেখেছেন। তাই আপনাদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, আপনারা পরবর্তীতে যা করবেন হিসাব করে করবেন। জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো অবস্থান গ্রহণ করবেন না।