29.6 C
Dhaka
Wednesday, June 25, 2025

ভারতজুড়ে হাহাকার

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে যান হাজারো মানুষ। আবার ভ্রমণ এবং কেনাকাটা করতে চায় হাজার হাজার পর্যটক ও ব্যবসায়ী। এতে করে প্রতিবছর ভারত বিপুল অর্থ আয় করে থাকে। বাংলাদেশিদের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল ভারতের, বিশেষ করে চেন্নাই, মাদ্রাজ ও পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালগুলো। কিন্তু বাংলাদেশে সাম্প্রতিক গণআন্দোলন এবং সরকার পরিবর্তনের পর থেকে মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভারতের চিকিৎসা শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি দেশজুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে সেটি রূপ নেয় সরকারবিরোধী আন্দোলনে। শেষ পর্যন্ত গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দিল্লি পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতির’ কারণ দেখিয়ে গত ৭ আগস্ট বাংলাদেশের সব ভারতীয় ভিসা সেন্টার (আইভিএসিএস) বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। এর চারদিন পরেই অবশ্য সেগুলো ফের খুলে দেওয়া হয়।

১১ আগস্ট ভারতীয় ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইটে এক বার্তায় বলা হয়, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামের ভিসা সেন্টারগুলো থেকে পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হবে। তবে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, ২০২২ সালে ভারতে বেড়াতে যাওয়া বিদেশি পর্যটকের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন বাংলাদেশিরা। তাদের ওপরে ছিল কেবল যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছিল ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুনঃ  পুলিশ সদস্যের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকার অনশন

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২২ সালে ভারতে ভ্রমণকারী বিদেশি পর্যটকদের শীর্ষ তিন উৎস ছিল যুক্তরাষ্ট্র (২২ দশমিক ১৯ শতাংশ), বাংলাদেশ (২০ দশমিক ২৯ শতাংশ) ও যুক্তরাজ্য (৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ)। ওই বছর পর্যটন খাত থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৩ কোটি রুপি আয় করেছিল ভারত। ফলে ভারতের পর্যটন শিল্প বাংলাদেশিদের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে বাংলাদেশি পর্যটকদের অবদান উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটরদের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়, গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে পর্যটন ব্যবসায় তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। এরপর যত সময় গেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর তাদের ব্যবসা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। স্থানীয় অপারেটরদের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে ভারত ভ্রমণকারী পর্যটকের সংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি কমেছে।

গত ১৮ আগস্ট দ্য ইকোনমিক টাইমসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে যাওয়া পর্যটকদের প্রায় এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশি নাগরিক। এই পর্যটকরা মূলত মেডিকেল ট্যুরিজম (চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশ গমন) বা কেনাকাটার জন্য যান, বিশেষ করে দুর্গাপূজা ও বিয়ের মৌসুমে।

আরও পড়ুনঃ  যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৩ মরদেহ, হাতে হাতকড়া

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, মেডিকেল ট্যুরিজমে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের একটি হলো ভারত। মূলত দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকান দেশগুলো থেকে মানুষ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে যান। ভারত সরকারের তথ্যমতে, দেশটিতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বিদেশিদের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। ২০২২ সালে ৪ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ মেডিকেল ভিসায় ভারতে গিয়েছিলেন। সেখানে, ২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসেই যান পাঁচ লক্ষাধিক বিদেশি। এদের সিংহভাগই বাংলাদেশি পর্যটক।

ভারতীয় সংস্থা কেয়ার এজ রেটিংসের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মানুষ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে যান। ভারতে যাওয়া মেডিকেল পর্যটকদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই হলেন বাংলাদেশি। এমনকি, ভারতের হাসপাতালগুলোতে সর্বমোট যত রোগী সেবা নেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিদের অংশ প্রায় তিন শতাংশ।

কেয়ার এজ রেটিংস বলছে, কেবল আগস্ট মাসেই ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আর পুরো বছরের হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম (২০২৩ সালের তুলনায়)।

আরও পড়ুনঃ  সৌদি*গামী কর্মীদের মেনিনজাইটিস টিকা লাগছে না

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রভাব এরই মধ্যে টের পেতে শুরু করেছে ভারতের হাসপাতালগুলো।
দেশটির বৃহৎ হাসপাতাল চেইন ফোর্টিস হেলথকেয়ারের একজন মুখপাত্র গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। অনেক রোগী ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল অথবা স্থগিত করেছেন। কোনো কোনো হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভারতীয় হাসপাতাল কর্মকর্তা জানান, এতদিন বাংলাদেশি রোগীদের ভারতে যাওয়া ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। সেখানকার অনেক হাসপাতালেই অধিকাংশ রোগী থাকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এ ধরনের হাসপাতালগুলো মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে।

ভারতের আরেকটি প্রধান হাসপাতাল চেইনের আন্তর্জাতিক মার্কেটিং টিমের এক নির্বাহী জানিয়েছেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের হাসপাতালগুলোতেও বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমতে দেখছেন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরুর পর থেকে এই সংখ্যা কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। অন্য একটি হাসপাতাল চেইনের নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমাদের আয় এরই মধ্যে পাঁচ শতাংশ কমে গেছে। রোগী কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। তাছাড়া, নতুন কোনো রোগীও আসছেন না।

ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পন্ন উন্নয়ন না করলে ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ