20 C
Dhaka
Monday, February 24, 2025

এক বিদ্যালয়ে প্রধানশিক্ষকসহ একই পরিবারের ১৭ জনের বিষয়ে যা জানা গেল

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক থেকে আয়া পর্যন্ত একই পরিবারের ১৭ জন কর্মরত হওয়ার বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসন আমলে প্রতিষ্ঠানের প্রধানশিক্ষক অনন্ত কুমার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এমন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধানশিক্ষক অনন্ত কুমারের দীর্ঘ ১৬ বছরে কিশামত বদি উচ্চ বিদ্যালয় টিকে পরিবার তন্ত্রের রূপান্তরিত করার একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়। এরপর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ উপজেলার রণচণ্ডী ইউনিয়নের কবিরাজের বাজারে অবস্থিত কিশামত বদি উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রায় এক এক জমির উপরে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করা হয় ২০০২ সালে। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে জমিদাতা কুলোদা মোহন রায়কে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচন করা হয়।

তৎকালীন সভাপতি কুলোদা মোহল রায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে অন্তত কুমারকে প্রধানশিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেন। প্রধানশিক্ষক অনন্ত কুমার নিয়োগ পাওয়ায় পর প্রতিষ্ঠানে নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের ভাই, স্ত্রী, ভাইয়ের স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজনকে নিয়োগ পাইয়ে দেন। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কুলোদা মোহন রায়ের মৃত্যুর পর প্রধানশিক্ষক নিজের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ছেলে বিমল চন্দ্র রায়কে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে নিয়ে আসেন।

বিপুল চন্দ্র কমিটির সভাপতি হওয়ার পর সভাপতি ও প্রধানশিক্ষক দুজনে মিলে দুই পরিবারের লোকজনদের নিয়োগ প্রদান করেন। বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক থেকে শুরু করে আয়া পর্যন্ত মোট ১৮ জন কর্মরত রয়েছেন। তার মধ্যে শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের একজন শিক্ষক ছাড়া বাকিরা সকলেই সনাতন ধর্মের। এর মধ্যে পাঁচজন প্রধানশিক্ষকের পরিবারের সদস্য।

আরও পড়ুনঃ  আমাকে রিমান্ডে কী করেছে, কেউ জানতে চায়নি: প‌রীম‌ণি

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, আমি দুইবার এই এলাকার মেম্বার ছিলাম। আমি মেম্বার থাকাকালীন সময়ে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। স্কুল প্রতিষ্ঠার ছয় বছর পর এমপিও হয় তখন জামায়াতের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান ছিলেন। নিয়োগের সময় আমিও ছিলাম সাক্ষাৎকারে। এসব নিয়োগ যখন হয়েছিল তখন থেকে কোন কিছু ছিল না, এখন হঠাৎ এসব কি শুরু হইলো। সরকার পালানোর পরে এদের টানাটানি শুরু হয়েছে কেন? আমাদের এই স্কুলের মান-সম্মান নষ্ট করার বুদ্ধি লাগাইছে এটা যাতে না হয়।

তিনি আরও বলেন, বিশেষভাবে অনুরোধ করে বলি স্থানীয় মানুষ হিসেবে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। শুধু এইটুকু চাই যে স্কুলের পড়াশুনা ঠিক মতো হয় এবং শিক্ষকদের উপর যাতে কোন হয়রানি করা না হয় সেই দাবি জানাই। নিয়োগের সময় তো যোগ্য লোকই ছিল কম। যারা যোগ্য ছিল এবং টাকা পয়সা খরচ করতে পেরেছে তাদেরকেই নেয়া হয়েছে এখানে তো রাজনীতির কোন কিছু নাই। একই পরিবারের পাঁচজন আছে বাকিগুলা তো সব বাইরের। তখন যোগ্যতা ছিল টাকা পয়সা ছিল ওরা খরচ করেছে তাই এদেরকে নেয়া হয়েছে।

সহকারী শিক্ষক বিনয় কিশোর সরকার বলেন, আমি ১৯৯৬ সাল থেকে এই স্কুলে কর্মরত আছি। নিয়োগ যদিও ১৯৯৬ সালে হলেও এমপিওভুক্ত হয়েছিল ২০০২ সালে। আমাদের প্রাক্তন সভাপতি কুলোদা মোহন রায় উনি আমাদের নিয়োগ দিয়েছেন যোগ্যতার ভিত্তিতে কোন পারিবারিকভাবে নয়। আমরা এই পরিবারের কোন সদস্যও নই। এখন কে বা কাহারা আমাদের প্রধানশিক্ষকের পরিবারের বিষয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এটা নিয়ে বলার কিছু নেই। কিন্তু এসব তো আগে করেনি, এখন কেনো করছে এটা তো ভালো না।

আরও পড়ুনঃ  রাতে মেয়ের জামাইয়ের বন্ধুর ফোন পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান বাবা, অতঃপর...


প্রধানশিক্ষকের ছোটভাই ও বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মদন মোহন রায় বলেন, ২০০৪ সালে আমার নিয়োগ হয়। তখন থেকে আমি এখানে চাকরি করছি। সবার নিয়োগ প্রক্রিয়া অবশ্যই বিধি মোতাবেক হয়েছে। এই স্কুলে পারিবারিক তন্ত্র না যোগ্যতার বলে সকলে চাকরি পেয়েছে। যার যতটুকু যোগ্যতা সেই অনুযায়ী আবেদন করেছে সেইভাবে চাকরি পেয়েছে।

প্রধানশিক্ষকের স্ত্রী ও বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধানশিক্ষক ববিতা রানী রায় বলেন, আমাকে এই স্কুলে সভাপতি নিয়োগ দিয়েছেন। তখন এই এলাকায় কোন বিএ পাস মেয়ে ছিল না। তা ছাড়া আমি কাহারোল থেকে কাব্য তীর্থ পাস করেছি। এখানে চাকরি করা আমার কোন ইচ্ছেও ছিল না। তখন স্কুলের সভাপতি আমাকে বলে বউমা তুমি এই স্কুলেই চাকরি করো। এভাবে প্রধানশিক্ষকসহ সভাপতি আমাকে নিয়োগ দিয়েছিল। আর এখানে কেউ কারো রক্তের সম্পর্কের নয়। সমাজে বাস করতে গেলে একটা সম্পর্ক ধরতে হয়। যা ছাড়ানো হচ্ছে গুজব ছাড়া কিছুই নয়, এগুলো সব মিথ্যা।

প্রধানশিক্ষক অনন্ত কুমার বলেন, স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় এই এলাকায় ডিগ্রি পাস কোনো পরিবারে ছিল না। এখনো তেমন পাওয়া যাবে না। পরে আশেপাশের এলাকার লোকজনকে নিয়ে স্কুল চালু করা হয়। আমাদের পরিবারে কিন্তু সবচেয়ে বেশি শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল। আমার স্ত্রীও তখন ডিগ্রি পাস। এছাড়াও আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী তাকে কিন্তু প্রোমোটের আওতায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কাজের মেয়ের বিষয় যেটা এসেছে তা যদি হয় তাহলে সে বাড়িতে কাজ করবে না স্কুলে কাজ করবে। এখন যদি কেউ এসব লিখে তাহলে তো কিছু করার নাই। যারা এসব লিখেছে তাদের আমি সাধুবাদ জানাই। তারা যদি বিজ্ঞ জ্ঞানী হতো তাহলে এসব লিখতো না। কাজের মেয়ে হলে বাড়িতে কাজ করবে স্কুলে কখন কাজ করবে। এখানে যারা চাকরি পেয়েছে সবাই যোগ্যতার ভিত্তিতে পেয়েছে। বর্তমান যুগে চাকরি নাই সবাই চাকরি চায়। নিয়োগের ভাইবা বোর্ডে তো আমি ছিলাম না, অন্য লোক ছিল। তারা যাকে নিয়োগ দিয়েছে তারা নিয়োগ পেয়েছে। বর্তমান জেনারেশন যারা আছে তারা তো চাকরির প্রেক্ষাপট বুঝে না। তারা মনে করে ডিগ্রি পাস করলে চাকরি হবে।

আরও পড়ুনঃ  জাবির ছাত্রী হল থেকে যুবক আটক, জুতা*পেটা করে পুলিশে সোপর্দ

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ-উজ-জামান সরকার বলেন, আমি এখানে নতুন। এ বিষয়ে কিছু জানি না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিদ্যালয়ের সভাপতি মৌসুমী হক বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় ওই স্কুলের বিষয়টি আমি দেখেছি। এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ আসে নাই। এ ধরণের কেনো অভিযোগ আসলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ