31.8 C
Dhaka
Thursday, July 31, 2025

রংপুরে হিন্দু ছাত্রীদের হিজাব পরার নির্দেশ, বরখাস্ত ২ শিক্ষক

রংপুর মহানগরীতে কামাল কাছনা এলাকার মোসলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে হিন্দু ছাত্রীদেরও হিজার পরে আসার নির্দেশের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুই শিক্ষককে সমায়িক বরখাস্ত করেছে প্রশাসন।

কয়েকজন ছাত্রী এ বিষয়ে প্রতিবাদ করার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) তিনি বলেন, মোসলেম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক হিন্দু সম্প্রাদায়ের ছাত্রীদের হিজাব পড়ার কথা বলেছিলেন বা গীতা পাঠের বিষয়ে বিভিন্ন কথা বলেছিলেন।

এ নিয়ে স্কুলে হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিলো। তাই এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। তারপর তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা গেছে, বুধবার সকালে শিক্ষার্থীদের সেই প্রতিবাদের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ায়। তার পরই বিকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়।

আরও পড়ুনঃ  গা*জা পোড়াতে চেয়েছিল যারা, রবের হুকুমে পুড়ছে তারাই!

সেই বৈঠকের পর পরই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান এবং ইসলাম ধর্মের শিক্ষক মাওলানা মোস্তাফিজার রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে দুই শিক্ষকই তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সম্প্রতি স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে প্রধান শিক্ষক ও ইসলাম ধর্মের শিক্ষক মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দুদেরও হিজাব পড়ে আসার নির্দেশ দেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে। তারা এ নিয়ে বুধবার স্কুল ক্যাম্পাসেও প্রতিবাদ জানায়।

এ নিয়ে স্কুলের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবেও উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি, রাজনৈতিক নেতা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা ও অভিভাবকরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, তার শিক্ষক তাকে কোরআনের সুরা মুখস্ত করতে এবং হিজাব পরতে বা পর্দা করতে বলেছেন। পর্দা না করলে শরীর ছেলেরা দেখবে। ক্লাসে আবার স্যারেরা তাদের বাজেভাবে গালি দেয়।

আরও পড়ুনঃ  সাড়া দেননি এসপি, পানির ট্যাংকে লুকিয়ে জীবন বাঁচান কনস্টেবল

আরেকজন ছাত্রী বলেন, ক্লাসে আমাদের স্যার বলেন, তোমরা হিন্দু মেয়েরা কজন আছ দাঁড়াও। বলল, তোমরা হিজাব পর না কেন? আমরা বলি, স্যার কেন আমরা হিজাব পরব। আমরা হিজাব পরব না, আমরা স্কার্ফ পরব। কিন্তু স্যার বলে যে, না তোমরা হিজাব পরে আসবা। শিক্ষক ক্লাসে ‘বাজেভাবে’ তাদের কথা বলেও জানান ওই ছাত্রী।

কয়েকজন ছাত্রীর অভিযোগ, সেই শিক্ষকরা মূর্তি পূজা, হিন্দু ধর্ম নিয়েও নানা কথা বলে। অ্যাসেম্বলিতে কোরআন তেলাওয়াত করা হলেও সময়ের অভাব দেখিয়ে গীতা পাঠ করানো হত না। তবে ছাত্রীরা এ নিয়ে অভিযোগ দেওয়ার পর গীতা পাঠ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার গীতা পাঠ বন্ধ রাখা হয়েছে।

ভিডিওতে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের ঘটনার বিচার দাবি করে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ সময় স্কুলে অভিভাবকরাও ছিলেন। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমান।

তিনি বলেন, আমার স্কুলে মেয়েদের হিজাব পরা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে এটি একটি ষড়যন্ত্র। আমরা অ্যাসেম্বলিতে বলেছিলাম, মেয়েরা তোমরা স্কুল ড্রেসের সঙ্গে স্কার্ফ পরে আসবে। আমরা কখনো হিজাব পরার কথা বলিনি।

আরও পড়ুনঃ  আমরা বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল নই, তারা নির্ভরশীল : শুভেন্দু

তাহলে শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অভিযোগ কেন করছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে একটি চাঁদাবাজ মহলের বিরুদ্ধে আমি থানায় মামলা করেছিলাম। তার কারণে এই কুচক্রি মহলটি স্কার্ফকে হিজাব বানিয়ে কোমলমতি স্টুডেন্টদের দিয়ে আমাদের হেনস্তা করার পাঁয়তারা করছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এ বিষয়ে একটি ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান প্রধান শিক্ষক।

অপরদিকে ইসলাম ধর্মের শিক্ষক মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভাই আমি ইসলাম ধর্মের ক্লাস নেই। আমি তো হিন্দু ধর্ম নেই না। একজন তার ভাইকে স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ঢুকাতে না পেরে এসব করছেন। তো আল্লাহ আছে, তার বিচার করবে। আর আমার বলার কিছু নেই।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ