সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী ১০০ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ প্রধান। আগামীতে এসব জনগোষ্ঠীকে আরও বেশি বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এবং ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। খবর আল জাজিরা
গত ৩ হাজার বছরের মধ্যে বিংশ শতাব্দী থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দ্রুত গতিতে বেড়েছে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা বলেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এছাড়া ১৯৯৩ সালের পর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ১৬০ থেকে ২১০ মিলিমিটার (ছয় থেকে আট ইঞ্চি পর্যন্ত)।
চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড় যাওয়া একটি শীর্ষ আন্তর্জাতিক এজেন্ডা হওয়ায় তিনি বিষয়টি বিশ্বনেতাদের সামনে উপস্থাপন করে বলেন, ‘উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার অর্থ আরও দুর্দশা ঘনিয়ে আসা।’
গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার ফলে অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, পরিষ্কার পানি দূষিত হচ্ছে, ফসল নষ্ট এবং অবকাঠামোগত ক্ষতিসহ জীববৈচিত্র ধ্বংস ছাড়াও অর্থনীতিরও ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে মাছ চাষ, কৃষি এবং পর্যটন খাত।
বিশ্বের আবহাওয়া সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গত বছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা ১৯৯৩ থেকে ২০০২ সালের চেয়ে দ্বিগুণ।
জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের জলবায়ু ও পরিবেশের সহযোগী ভাইস-প্রেসিডেন্ট রেয়ান হোবার্ট বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন। এছাড়া ভূপৃষ্ঠের বরফ গলে যাওয়া এবং সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়ার প্রভাব বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে।
গত মাসে অ্যান্তোনিও গুতেরেসে বলেন, সমুদ্রের পানি উপচে পড়ছে, যার জন্য মানুষের কর্মকাণ্ড দায়ী। জাতিসংঘ বলেছে, বিশ্বের প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে একজন মানুষ সমুদ্র উপকূলে বসবাস করে। যার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ, চীন, ভারত, নেদারল্যান্ড এবং পাকিস্তানও। সমুদ্রপৃষ্ঠের বেড়ে যাওয়ার কারণে সমুদ্র উপকূলে বসবাস করা এসব দেশের মানুষকে আরও বেশী প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করতে হবে। এছাড়া এ ঝুঁকির মধ্যে ব্যাংকক, বুয়েন্স আয়ার্স, লাওস, লন্ডন, মুম্বাই, নিউইয়র্ক এবং সাংহাইয়ের মতো শহরও রয়েছে।