24 C
Dhaka
Thursday, February 20, 2025

আন্দোলনের সময় ছাত্রদের সঙ্গে কুকর্ম করেছিলেন সেই ঊর্মি

চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেও কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করেছিলেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সদ্য বরখাস্ত সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) তাপসী তাবাসসুম (ঊর্মি)।

আন্দোলন চলাকালে তিনি জেলার সমন্বয়কদের ফোন করে মিছিল, মিটিং ও আন্দোলনের সময়সূচি বেঁধে দিতেন। তিনি কখনো সমন্বয়কদের বলতেন, ৩০ মিনিটের মধ্যে আজকের কর্মসূচি শেষ করতে হবে। আবার কখনো বলতেন, এক ঘণ্টার মধ্যে কর্মসূচি শেষ করতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার লালমনিরহাটের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া একাধিক সমন্বয়ক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত সোমবার লালমনিরহাট জেলায় তাপসী তাবাসসুমকে (ঊর্মি) ওএসডির পর সাময়িক বরখাস্ত করায় জেলায় তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

জেলার ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন মো. হামিদুর রহমান। তিনি লালমনিরহাট সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন জেলায় ১৬ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু করি, তখন তিনি ছিলেন এই আন্দোলন দমনের মুখ্য ভূমিকায়। তিনি আমাদের প্রতিনিয়ত ফোন দিতেন। আমাদের কর্মসূচি সম্পর্কে জানতেন। তিনিই দিকনির্দেশনা দিতেন যে এত সময় নেওয়া যাবে না। দ্রুত তোমরা কাজ শেষ করো।

আরও পড়ুনঃ  মেয়েটা মানসিক*ভাবে অসুস্থ ছিল, এমন ঘটনা ঘটাবে বুঝতে পারিনি

আরেক সমন্বয়ক মো. আরমান আসিফ বলেন, ‘আমরা জেলায় যেদিন থেকে আন্দোলন শুরু করি, সেদিন থেকেই তিনি আমাকে ফোন করতেন আন্দোলনের খোঁজ নেওয়ার জন্য। কাল আমাদের কী কর্মসূচি, কোথায় আছে, সেটা তিনি জানতেন। আমরা শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড়ে কর্মসূচি পালন করতাম। একদিন তিনি (তাপসী) আমাদেরকে সময় বেঁধে দিলেন।

বললেন, আগামীকাল এক ঘণ্টার মধ্যে আপনাদের কর্মসূচি শেষ করবেন। আমরা তার বাধা মানিনি। আমি বলেছি, পারলে আমাকে গ্রেপ্তার করেন, তবুও আমরা থামব না।’

এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ বলেন, তিনি তো আর আমাদের হুমকি দিতে পারেন না। বোঝাতেন আন্দোলনের ফলাফল নিয়ে।

বিতর্কিত ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির বাড়ি ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের মেয়ে। তার বাবা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহীদ স্মৃতি কলেজের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  ইসরায়েলকে নিন্দা জানিয়ে ১০৪ দেশের চিঠি, সই করলো না ভারত

এর আগে তিনি ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। তবে বর্তমানে তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন। ঊর্মির মা নাসরিন জাহান বর্তমানে হাজি কাশেম আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ মুক্তাগাছায় গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

তাপসী তাবাসসুমকে (ঊর্মি) সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগ থেকে পড়াশোনা করে। ৪০তম বিসিএস প্রশাসনে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যুক্ত হন। তিনি জেলা প্রশাসকের কাযালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সহকারী পরিচালক, রাজস্ব শাখা, জুডিশিয়াল মুনশিখানা (জেএম) সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শিক্ষাজীবনে তাপসী সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও চাকরি পাওয়ার পর তিনি হয়েছেন পুরোদমে আওয়ামীপন্থী। নাম না প্রকাশ করার শর্তে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তারই এক সহপাঠী বলেন, ‘তাপসী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনে খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী ছিল।

তার পরিবর্তন আসে চাকরি পাওয়ার পর থেকে। ছাত্রজীবনে তিনি কখনো রাজনীতির সঙ্গে সেভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে সামাজিক মাধ্যমে তাপসীর একাধিক ফেসবুক পোস্ট ছড়িয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমি জয় বাংলার লোক, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক।’ তবে এই পোস্ট তার কি না তা নিশ্চিত করতে ও সার্বিক বিষয়ে জানতে টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুনঃ  ‘হিল্লা বিয়ের’ ফতোয়া নিতে মাদ্রাসাশিক্ষকের কাছে নারী, অতঃপর...

এর আগে গত শনিবার ওই ম্যাজিস্ট্রেট ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টাকে কটাক্ষ করে লেখেন, “সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি।

এতই সহজ! কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়। তবে একটি বিষয়ে আপনাকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ আপনাদের এই স্লোগানটা যে অক্ষরে অক্ষরে সত্য ছিল এটা এত অল্প সময়ে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার করে দিয়েছেন, এ জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”

সূত্র : যমুনা টিভি

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ