আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের কথা জানানো হয়েছে।
নিষিদ্ধের খবরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। পেস্টে তিনি লেখেন, ‘ঈদ মোবারক’।
সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, আজ আমাদের জীবনের অন্যতম আনন্দের একটা দিন। ছাত্রলীগ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো কেউ ছিল না। এই ছাত্রলীগ ১৫ জুলাই আমাদের ওপর হামলা করেছে, সারা দেশে তারা অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে শহীদ করেছে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাই ছাত্রলীগের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য।
সমন্বয়ক আবু সাঈদ বলেন, আজকে আমরা অনেক বেশি খুশি। কারণ, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা সারা দেশ থেকে ছাত্রলীগ ও তার দোসরদের সমূলে উৎখাত করতে চাই। আজকে ঢাকা শহরের মিষ্টি শেষ হয়ে যাক, তবুও আনন্দ শেষ না হোক।
সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, একজন চারণ কবি বলেছিল ছাত্রলীগ নাকি ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু আজ তারা কোথায়? আজ খুনি হাসিনাও নেই, চারণ কবিও নেই, ছাত্রলীগও নেই। তারা বলেছিল তারা নাকি আমাদের ৭ মিনিটে আউট করবে। আজ আমরা দেখেছি, তারা মধুর ক্যান্টিনের সামনে ৪৬ সেকেন্ডে আউট হয়ে গেছে। তারা রাজপথ থেকে সৃষ্টি হয়ে রাজপথ থেকে পালিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর কোনো মুজিববাদের ঠিকানা হবে না। ২৪ বিপ্লব সবাইকে দেখিয়েছে মুজিববাদ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কাছে সত্য ইতিহাস গোপন করে রেখেছিল। কিন্তু এখন তারা আর সেটা পারবে না। আমরা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করেছি। এখন দেশের সব সাধারণ মানুষ লুকায়িত সত্য ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।
সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, ৫ আগস্টের পরে ছাত্রলীগ গর্তে লুকিয়েছে। তাদের নেত্রী ভারতে পালিয়ে গেলেও তাদের এ দেশে ফেলে গেছে। দেশের সব ছাত্র-জনতাকে বলতে চাই, আপনারা একটা একটা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গর্ত থেকে টেনে তুলে ধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করবেন। একজনও যেন আইনের হাত থেকে রক্ষা না পায়।
এর আগে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-২ এর দেওয়া এক প্রজ্ঞাপনে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, আজ বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জানিয়েছিলেন, আমরা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি যারা আছি তারা ছাত্রলীগের প্রশ্নে আপোষহীন। গত ১৬ বছরে দেশের ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ যে নৃশংসতা করেছে সেখানে আগামীতে ছাত্রলীগের পুনর্বাসনের ন্যূনতম কোনো সুযোগ নেই। ছাত্রলীগ জঙ্গি সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য যত ধরনের কম্পোনেন্টস প্রয়োজন, সবগুলো এই সংগঠনের রয়েছে।