27.7 C
Dhaka
Wednesday, June 25, 2025

‘সবার মুখে মুখোশ ছিল, তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে’

‘২০ থেকে ২৫ জন হবে। সবার মুখে মুখোশ ছিল। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করেন। কেউ কেউ কোপাতে থাকেন। প্রাণ বাঁচতে যে যেদিকে পেরেছেন, পালিয়েছে’- এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় একদল মুখোশধারীর হামলায় আহত মো. জসিম উদ্দিন (৫০)।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের নিরামিশপাড়া গ্রামের আসদ আলী মাতব্বরপাড়া মসজিদ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এতে ১২ থেকে ১৫ জন গুলিবদ্ধ হন। এর মধ্যে ১১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন আছেন তিনজন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

ঘটনার সূত্রপাত হয় গতকাল রাত ৯টার দিকে। স্থানীয় দোকানি মহিউদ্দিন সড়ক ধরে নোয়াপাড়া সদর থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। সড়কটি অন্ধকার থাকায় তিনি হামলাকারীদের দেখেননি। তারা মহিউদ্দিনের পথ রোধ করে মুঠোফোনে কাকে খুদে বার্তা দিয়েছেন, এমন প্রশ্ন করে মারধর ও কুপিয়ে আহত করেন। একপর্যায়ে তিনি আহত অবস্থায় পালিয়ে ঘরে চলে আসেন। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে ঘটনাস্থলে গেলে মুখোশধারীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন।

আরও পড়ুনঃ  আগামী বছরের ২৬ দিনের ছুটিতেও রয়েছে দুঃসংবাদ

আহত জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি তিন মাস আগে প্রবাস থেকে ফিরেছি। মহিউদ্দিন আর আমরা সবাই একই বাড়ির। তাকে মারধর করা হয়েছে শুনে আমরা যাই সেখানে। মোবাইলে রাজনৈতিক ম্যাসেজ দেয়া নিয়ে মহিউদ্দিনকে মারধর করা হয়। কিন্তু সে এমন কিছু করেনি। আমরা কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না।’

গুলিবিদ্ধ হয়ে উপজেলা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাদের গায়ে ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার ডা. রিভু রাজ চক্রবর্তী বলেন, আহত ব্যক্তিদের কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আহত বাকি তিনজনের শরীরে গুলির চিহ্ন নেই। তবে জখমের দাগ রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  মামলায় নতুন মোড়, স্ত্রী তামিমা আসলে কার?

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যে বাড়ির লোকজন আহত হয়েছেন, সেটি নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়েজ আহমদের পুরোনো বাড়ি নামে পরিচিত। তার ছেলে কামাল উদ্দিনের ওপর হামলা করার জন্যই মুখোশধারীরা গিয়েছিলেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ার‍ম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

অন্যদিকে হামলাকারীরা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। থানা-পুলিশ বলছে, মুহাম্মদ মামুনের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। তিনি গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন। মামুন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক নুরুল আলম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

আরও পড়ুনঃ  এমপি আজিমকে ওজন মেপে প্যাকেট করেছে কসাই জিহাদ

এ বিষয়ে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মাহাবুবুর রহমান বলেন, রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে। হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি মুহাম্মদ মামুনের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন সন্ত্রাসী গতকাল রাতে তার প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান খায়েজ আহমদের ছেলে কামাল উদ্দিনকে আক্রমণ করতে যায়। এলাকাবাসী তাতে বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে ১২ থেকে ১৫ জন সাধারণ মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়।

ওসি আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা এর আগেও কামাল উদ্দিনের বাড়িতে একাধিকবার গুলি ছুড়ে তার ওপর হামলা করেছিল। ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের ফেলে যাওয়া একটি মোটরসাইকেল ও বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র জব্দ করেছে পুলিশ। আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এখনো মামলা হয়নি। জানা গেছে- আজ রাতের মধ্যে তারা মামলা করবেন।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ