24 C
Dhaka
Thursday, February 20, 2025

হাসিনার সরকার পতনের পর ১৬৫৭ কোটিপতি হাওয়া

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট গদি ফেলে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপরই টানা প্রায় ১৬ বছরে ব্যাংক খাতে আওয়ামী সরকারের দুর্নীতি আর লুটপাটের চিত্র স্পষ্ট হতে থাকে। দলটির ক্ষমতাকালে তর তর করে বাড়তে থাকা কোটিপতি এখন পলকেই পড়তির দিকে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আগের সরকার পতনের পরই এক ধাক্কায় কোটিপতির হিসাব কমেছে এক হাজার ৬৫৭টি।

এসব হিসাবে কমপক্ষে কোটি টাকা জমা ছিল। এই হিসাবগুলো গত তিন মাসে হাওয়া হয়ে গেছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা পিষ্ট। সাধারণ মানুষ এখন সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।

ফলে ব্যাংকে টাকা জমানোর চেয়ে অনেকে আগের জমানো অর্থ ভেঙে খাচ্ছেন। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর সাবেক এমপি, মন্ত্রী, নেতাসহ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের হিসাব নেওয়া শুরু হয়েছে। অনেকের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করা হয়েছে। ফলে বড় অঙ্কের আমানতকারীরা ভয়ে টাকা সরিয়ে ফেলছেন। এসব কারণে বিত্তশালী ও বড় প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব কমেছে।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ‘স্যালুট’ যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ কোটি ২০ লাখ ২৮ হাজার ২৫৫টি। এসব হিসাবে জমা আছে ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। জুন প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৮৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫২৩টি এবং এসব হিসাবে জমা ছিল ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে আমানতকারীর সংখ্যা বাড়লেও টাকার অঙ্কে আমানতের পরিমাণ কমেছে।

একই সঙ্গে আলোচিত সময় (সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে) এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে—এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ১২৭টি। কোটি টাকার ওপরে এসব হিসাবে জমা আছে সাত লাখ ৪৬ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৪১ শতাংশ কোটি টাকার হিসাবধারীদের। এর আগে গত জুন প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি আমানত ছিল এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টি। ওই সব হিসাবে জমা ছিল সাত লাখ ৭৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার ওপরে থাকা হিসাব ও তাদের জমানো টাকা দুটোই কমেছে।

আরও পড়ুনঃ  মুরগি ব্যবসায়ীর হাত ধরে উধাও গরুর খামারির স্ত্রী

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাবে ব্যক্তির পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানের নামও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল পাঁচজন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতিদের হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে দুই হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে পাঁচ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে আট হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি।

আরও পড়ুনঃ  গভীর রাতে সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের ফেসবুক স্ট্যাটাস

২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এই আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে এবং গত জুনে সেই হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টিতে। সবশেষ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সেই হিসাবের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ১২৭টিতে।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ