বিজয় দিবসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আওয়ামীপন্থী এক শিক্ষককে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই শিক্ষকের নাম শহিদুল ইসলাম। তিনি হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যাম্পাসের ‘মুক্ত বাংলা’য় শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে বাধা দেন। বাধার মুখে তিনি ফুল না দিয়ে চলে যান। পরে বিভাগের শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দাবি, স্বৈরাচারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি এখনও স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের পক্ষ নিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে এবং হলসমূহে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে সেখান থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়।
পরে শোভাযাত্রা নিয়ে ক্যাম্পাসের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘মুক্ত বাংলা’য় সমবেত হয় তারা। সেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। পরে একে একে বিভিন্ন সমিতি, হল, বিভাগ, ছাত্রসংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে।
এক পর্যায়ে শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগও সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে যান। শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে তিনি ফুল দেওয়ার জন্য মুক্ত বাংলার বেদিতে উঠলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইট ও সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসানসহ কয়েকজন সহ-সমন্বয়ক এতে আপত্তি জানালে তিনি বেদি থেকে নেমে চলে যান। পরে তার বিভাগের শিক্ষার্থীরা তার অনুপস্থিতিতেই শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক শহিদুল ইসলাম চ্যানেল 24-কে বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভাগের পক্ষ থেকে ফুল দিতে গিয়েছিলেন। শহিদ বেদীতে ওঠার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ কতিপয় শিক্ষার্থী তাকে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের বিরোধিতাকারী ও দোসর আখ্যা দিয়ে ফুল দিতে নিষেধ করেন। পরে সেখান থেকে চলে যান তিনি।’ ওই শিক্ষক দাবি করেছেন, ছাত্র আন্দোলনের সময় আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম না। শুধুমাত্র ভিন্ন আদর্শকে ধারণ করার কারণেই আমার সঙ্গে এমনটি করা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক এবং আমাকে মর্মাহত করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইট চ্যানেল-24 কে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ওই শিক্ষক সরাসরি বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। আমরা তাকে বলেছি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আন্দোলনে বিরোধীতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার তথ্য গেছে। গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে আমরা শহিদ বেদিতে উঠতে দিতে পারি না। আমরা তার সঙ্গে কোন বাজে ব্যবহার করিনি। আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। পরে তিনি চলে গেছেন।’ সমন্বয়ক আরও বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাজারও ভাই-বোনকে জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে। গণহত্যায় জড়িত পতিত স্বৈরাচার এবং তার দোসররা প্রকৃত বিজয়কে ধারণ করতে পারে না। তাই মনে করি, গণহত্যাকারী স্বৈরাচারের দোসরদের শহিদ বেদিতে উপস্থিতি শহিদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করার শামিল। আর আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।
এই বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান চ্যানেল 24 কে জানিয়েছেন, ওই সময় আমি ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি দেখতে পাইনি। পরে এই ব্যাপারে কিছুটা শুনেছি। পুরো বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম ইবি বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদক। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় তাকে শিক্ষক হিসেবে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় এক ছাত্রী নেকাব পরিহিত অবস্থায় ভাইভা দিতে আসায় ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য নেকাব খুলতে বলেন। তবে ওই শিক্ষার্থী নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানায়। এবং প্রয়োজনে নারী শিক্ষকের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করার দাবি জানান। তবে সে নেকাব না খোলায় উপস্থিত শিক্ষকরা তার ভাইভা পরীক্ষা নিতে অসম্মতি জানান। ওই ভাইবা বোর্ডে শিক্ষক শহিদুলসহ বিভাগের সভাপতি ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। পরে শিক্ষার্থীদের কয়েকদফা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ওই ছাত্রীর পুনরায় ভাইভা নেওয়া হয়।