22 C
Dhaka
Tuesday, February 18, 2025

চা*লের দাম বাড়িয়েছেন মিল মালিকরা, দোষ দিচ্ছেন মজুত*দারদের

প্রতি বস্তায় বেড়েছে ৩০০-৫০০
চালের দাম বাড়িয়েছেন মিল মালিকরা, দোষ দিচ্ছেন মজুতদারদের
দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০১
দেশে আমনের ভরা মৌসুমেও রাজশাহীতে বেড়েছে চালের দাম
দেশে আমনের ভরা মৌসুমেও রাজশাহীতে বেড়েছে চালের দাম
দেশে আমনের ভরা মৌসুমেও রাজশাহীতে বেড়েছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে আমন ধান থেকে জেলার চালকলগুলোতে যেসব চাল উৎপাদন হয়, সেগুলোর দামও বেড়েছে। এসব চালের মধ্যে কাটারি, জিরাশাইল, নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে কেজিতে ছয় থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত।

ব্যবসায়ী ও চালকলের মালিকরা জানান, মৌসুম হলেও ধানের দাম বাড়তি। ধান মজুত করেছেন অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী। তাদের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কিনে চাল তৈরিতে খরচ পড়ছে বেশি। এজন্য চালের দাম বাড়িয়েছেন তারা। তবে সেটি বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। যা বাজারে গিয়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এটি বেড়েছে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারণে।

এ অবস্থায় পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, চালকলের মালিকরা দাম বাড়াচ্ছেন। চালকলের মালিকরা বলছেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সব দোষ পাইকারি ব্যবসায়ীদের। কারণ চালকলের মালিকরা এক টাকা বাড়ালে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাড়ায় দ্বিগুণ।

তারা একে-অপরকে দোষারোপ করলেও বাড়তি দামে চাল কিনতে কষ্ট হচ্ছে ক্রেতাদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্রেতারা বলেছেন, প্রতিটি জাতের চালের দাম ছয় থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোটা থেকে চিকন সব চালের দামই চড়া। সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়েছে। এজন্য একে-অপরকে দোষারোপ করছেন।

কেজিতে সাত-আট টাকা পর্যন্ত বেড়েছে

রাজশাহী নগরের বিভিন্ন বাজার ও দোকান ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে গত দুই সপ্তাহ ধরে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। পাইকারি ও চালকলের মালিকরা দাম বাড়ানোর কারণে খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। শনিবার বাজারে বিআরআই-২৮ জাতের কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৫-৬৮, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৬৫ টাকা। মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৭৮-৮০, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬৮-৭৫ টাকা। নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৬, যা ছিল ৭০-৭৮ টাকা। গুটি স্বর্ণার কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০-৫৫ টাকা।

আরও পড়ুনঃ  চাঁনখারপুলে গণহ*ত্যা: কনস্টেবল সু*জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

ক্রেতাদের ক্ষোভ

নগরের বাসিন্দা রাজিব হোসেন বলেন, ‘সব চালের দাম বেড়েছে। এভাবে বেড়ে যাওয়া আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য অনেক কষ্টের। সরকারের উচিত চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।’

নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘আমাদের ফসলি জমি না থাকায় সারা বছর চাল কিনতে হয়। এবার ভেবেছিলাম দাম কমবে। কিন্তু এখন দেখছি আরও বাড়তি। সরকারকে বিষয়টি দেখা উচিত। এখনও বাজারে সিন্ডিকেট থাকা হতাশাজনক।’

নগরের বহরামপুর এলাকার তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘চাল প্রত্যেক দিনই সবার কিনতে হয়। তাই সরকারের অন্যদিকের চেয়ে এদিকে নজর দেওয়া উচিত। কারণ সিন্ডিকেটের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে আছে।’

নগরের সাহেববাজারের চাল ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মানভেদে ৫০ কেজি চালের প্রতি বস্তায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখানে আমাদের কোনও হাত নেই। কারণ আমরা পাইকারি দরে কিনে সামান্য লাভ করে বিক্রি করে দিই।’

গত ২৯ ডিসেম্বর নগরের বিভিন্ন চালের আড়ত ও দোকানে দেখা গিয়েছিল, প্রতি ৫০ কেজি আঠাশ চালের বস্তা বিক্রি হয়েছে তিন হাজার টাকায়। মোটা চাল বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৪০০ টাকায়। জিরাশাইল বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ২০০ টাকায়। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে এসব চালের বস্তায় দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এখন আঠাশ চাল বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৫০০ টাকায়। জিরাশাইল তিন হাজার ৮০০ টাকা।

আরও পড়ুনঃ  স্বামীর পুরু*ষাঙ্গ কেটে হাস*পাতাল ও থানায় ফোন দিলেন দ্বিতীয় স্ত্রী

যা বলছেন চালকলের মালিকরা

চালকলের মালিকরা বলছেন, এখন মিলপর্যায়ে প্রতি বস্তা আঠাশ চাল বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ২৫০ থেকে তিন হাজার ৩৫০ টাকা। মোটা চালের বস্তা দুই হাজার ৭৫০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা ও জিরাশাইল তিন হাজার ৫০০ টাকায়। এই চাল আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে গেলে বস্তায় বেড়ে যাচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে আরও এক দফা দাম বাড়ায় ক্রেতার কাছে যেতে প্রকারভেদে বস্তায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে যাচ্ছে। মূলত এজন্য চালের দাম বেশি।

শনিবার রাজশাহীর খুচরা বাজারে আঠাশ চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৭২-৭৫ টাকা। গুটি স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৬৩-৬৫ টাকা ও জিরাশাইল ৮০ টাকা।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন বেশি দামে কিনতে হয়

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কখনও সরবরাহ সংকট, কখনও ধানের দাম বেশি বলে চালের দাম বাড়ান চালকলের মালিকরা। আমনের ভরা মৌসুমে সংকটের কথা বলে আবারও বস্তায় সর্বোচ্চ ৩০০-৪০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে বেশি দামে কিনে পাইকারিতে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। মাঝারি আকারের প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে সপ্তাহের ব্যবধানে ছয় থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত।

নগরের সাগরপাড়া এলাকার অমিত স্টোরের স্বত্বাধিকারী অমিত সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আড়ত থেকে চাল কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে আমাদের। গত এক সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়ে গেছে। প্রতি বস্তায় ৪০০-৫০০ টাকা বাড়তি গুনতে হয়। আবার বাড়তি দামে বিক্রি করা হলে গ্রাহকরা অসন্তুষ্ট হচ্ছেন।’

সাহেববাজারের এপি চাল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী প্রকাশ প্রসাদ বলেন, ‘মিল থেকে চাল নিয়ে এসে বিক্রি করছি। গত কয়েকদিনে চালের দাম বেশ বেড়েছে। মিল মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগীরা উপকৃত হচ্ছেন। ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মিলে যদি কম দামে কেনা যায়, তাহলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারি।’

আরও পড়ুনঃ  সাবান*সহ ৬৫ প*ণ্যে ভ্যাট বাড়ছে

নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকার পাইকারি চাল বিক্রেতা সততা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সোলায়মান আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে চালের দাম বাড়ছে। এজন্য আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারি। কিন্তু বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’

ধান মজুতের অজুহাত মিল মালিকদের

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কামাল অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ধান মজুত করে রেখেছেন। তারা বাড়তি দাম না পেলে ধান ছাড়ছেন না। ফলে তাদের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। আমাদের খরচও আছে। এ কারণে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।’

রাজশাহী চালকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলামও ধানের দামকে দায়ী করছেন। তিনি বলেন, ‘চালের দাম বাড়লেই আমাদের দোষ হয়। কিন্তু এখন ধানের দাম বাড়তি থাকায় চাল করতে বেশি খরচ পড়ছে। এ কারণে মিল থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে। কৃষকদের পাশাপাশি ধানের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ধান মজুত করছেন। দাম বেশি না পেলে বিক্রি করছেন না। তার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।’

দাম নিয়ন্ত্রণে চলছে অভিযান

মজুতদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রাজশাহীর উপপরিচালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযান চলছে। চাল ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হচ্ছে। এরপরও যারা সতর্ক হচ্ছেন না, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।’

মোহনপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নুরুন্নবী বলেন, ‘আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। যাতে করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ধান ও চাল মজুত করতে না পারেন, সেজন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।’

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ