ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) রেজিস্ট্রার পদ ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ভিসির কার্যালয়ে হট্টোগোলের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে ভিসি, প্রো-ভিসি ও প্রক্টরিয়াল বডির শিক্ষকদের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, রেজিস্ট্রার পদে থাকা আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা আলী হাসানকে সরিয়ে নতুন নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদল। গত ৩ মার্চ আবারো ভিসির কাছে সকল পদ থেকে আওয়ামীপন্থীদের অপসারণের দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এসময় রেজিস্ট্রার পদে কোন শিক্ষককে নিয়োগের দাবি জানান তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৪ মার্চ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রকৌশলী এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালকের (পিডি) সাথে সভায় বসেন ভিসি। সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক পদ থেকে ফ্যাসিস্টের দোসরদের অপসারণের দাবিতে বেলা সাড়ে ১২টায় ভিসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হট্টগোল শুরু করে। পরে দুপুর পৌঁনে ১ টার দিকে প্রো-ভিসি ড. এয়াকুব আলী কার্যালয় থেকে নিচে নেমে আসেন। পরে তিনিসহ জিয়া পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ভিসির কার্যালয়ে ঢোকেন। এসময় রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এসময় সাংবাদিকদের ভেতরে প্রবেশে বাঁধা দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে এক পর্যায়ে প্রো-ভিসি ও প্রক্টরিয়াল বডির মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এসময় হট্টগোল শুনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ভিসির কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে তাদেরকেও বাধা দেয় ছাত্রদল কর্মীরা। পরে তাদেরকে উপেক্ষা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়কের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।
হট্টগোলের এক পর্যায়ে প্রো-ভিসি প্রক্টরকে ‘জামায়াত’ বলে আখ্যা দিলে দুজনের মধ্যে উচ্চবাচ্য সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ প্রক্টরের। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এই ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে কার্যালয় ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে বেলা সাড়ে ৩টায় গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্বে বাঁধা ও শিক্ষক হেনস্তার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে ইবি ছাত্র ইউনিয়ন।
ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী জানায়, প্রো-ভিসি ড. এয়াকুব আলী এবং ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মকর্তাকে নিয়োগে আগ্রহী। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা শিক্ষকদের মধ্য থেকে রেজিস্ট্রার নিয়োগের পক্ষে। এটাকে ঘিরেই ঝামেলার সূত্রপাত বলে জানান তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, পদ ভাগাভাগি নিয়ে প্রশাসনকে চাপ দেয়া পতিত স্বৈরাচারী মনোভাবের সঙ্গে মিলে যায়। আজকের এই ঘটনা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘রেজিস্ট্রার পদে বিএনপিপন্থী একজন কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছিলো শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান তাদেরকে রেজিস্ট্রার পদে শুধু একজন কর্মকর্তার নাম প্রস্তাব না করে কয়েকজনকে প্রস্তাব করার কথা বলেন। প্রক্টর এ কথা কেন বললো এ জন্য ছাত্রদলের প্যাডে ড. শাহিনুজ্জামানের পদত্যাগ দাবির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। এসময় আমি তাদেরকে ছাত্রদলের প্যাড ব্যবহার করতে নিষেধ করি এবং এই দাবির বিষয়ে অসম্মতি জানায়।
এরপর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও মাসুদ রুমি মিথুন ভিসির সঙ্গে কথা বলতে যায়। এসময় প্রক্টরের বিষয়ে কথা উঠায় সাহেদ আহম্মেদ। তখন প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী প্রক্টরকে জামায়াত বলে সম্বোধন করলে হট্টগোল তৈরি হয়। ভিসি কার্যালয়ে প্রবেশ করতে বাঁধা প্রদানের বিষয়টিও দুঃখজনক। কোন ব্যক্তি এবং ব্যক্তির কর্মীদের দায় ছাত্রদল নিবে না।’
শাখা ছাত্রদলের আহ্ববায়ক সাহেদ আহম্মেদের ভাষ্য, আমরা ভিসি স্যারের সাথে কথা বলার জন্য আমাদের নেতাকর্মীসহ সবাইকে বের হতে বলি। সেখানে প্রো-ভিসি ও প্রক্টরের মাঝে বাকবিতন্ডা হয়। সেখানে আমরা কোন হট্টগোল করিনি।
প্রো-ভিসি ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, আমি প্রক্টরকে ‘জামায়াত’ বলিনি। ভিসির কার্যালয়ে এক জুনিয়র শিক্ষক আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। কিন্তু ভিসি এর কোনো প্রতিবাদ করেনি। এর বিচার না করলে আমি বিষয়টি অন্যভাবে দেখবো।
ভিসি ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ভিসির কার্যালয়ে এমন ঘটনা অনাকাঙক্ষীত। এই বিষয় নিয়ে শিক্ষকদের উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেয়া হবে।