30.2 C
Dhaka
Tuesday, July 1, 2025

এবার পাকিস্তানে একযোগে হামলার ‘যুদ্ধপরিকল্পনা’ নিয়ে তথ্য দিলেন হামিদ মির

ইরান-ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হলেও এই সামরিক সংঘাত সামনে এনে দিয়েছে আরও ভয়ঙ্কর এক যুদ্ধপরিকল্পনা-যেখানে পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিমপ্রধান দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যৌথভাবে হামলার ষড়যন্ত্র করছে ভারত ও ইসরায়েল। এই হুমকি কেবল কল্পনা নয়-এখন তা বাস্তবতা হয়ে উঠছে, যার প্রমাণ রয়েছে হাতে। এমনটি জানিয়েছেন পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, উপস্থাপক ও কলাম লেখক হামিদ মির।

সোমবার (৩০ জুন) প্রকাশিত কলামে তিনি বলেন, জায়োনিজম আর হিন্দুত্ব এই দুই মতাদর্শ নতুন জোট গড়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখন কেবল রাজনৈতিক মিত্রই নন-তারা একই মতাদর্শের সৈনিক।

মোদির হিন্দুত্ববাদী নীতিমালা ও নেতানিয়াহুর জায়োনিস্ট আদর্শ মিলে তৈরি হয়েছে এমন এক জোট, যা শুধু সামরিক নয়, ধর্মীয়-রাজনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার দিকেও এগোচ্ছে।’

মোদি সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সহায়তায় হামলার পরিকল্পনা করছে, কারণ কাশ্মিরকে আরেকটি গাজা বানাতে চায় ভারত। এখন এমনকি ভারতপন্থি কাশ্মীরি নেতারাও, যেমন ফারুক আবদুল্লাহ, বলছেন- যদি ভারত আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মির সমস্যার সমাধান না করে, তাহলে কাশ্মির একদিন সত্যিই গাজায় পরিণত হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত গুলি ছুড়েছেন সিনওয়ার

মোদি যেন এক বিভ্রমের জগতে বাস করছেন। ২০২৫ সালের অক্টোবরের বিহার নির্বাচন-এর আগে ইসরায়েলকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের একটি সামরিক ‘জয়’ অর্জন করতে মরিয়া নরেন্দ্র মোদি।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধ কিংবা কাশ্মিরে গণহত্যা-এগুলো এখন মোদির রাজনৈতিক প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু তিনি একটা জিনিস ভুলে গেছেন, এটি ১৯৭১ সাল নয়, এটি ২০২৫। পাকিস্তান কখনোই ভারত ও ইসরায়েলকে কাশ্মির রাজ্যকে গাজা বানাতে দেবে না।মোদি ও নেতানিয়াহু যেন পাকিস্তানকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেন।

এর আগে, ৭০-৮০ দশকে পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য একযোগে হামলার পরিকল্পনা করেছিল ইসরায়েল এবং ভারত।

অন্য দিকে, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক আজাদ এসা যিনি কাশ্মিরে ভারতীয় সেনা ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি সেনা কাছ থেকে দেখেছেন, বলেন-এটি দুই ব্যক্তির জোট নয়, বরং দুই মতাদর্শের ঐক্য।

কাশ্মিরকে ‘গাজা’ বানানোর পরিকল্পনায় ২০১৭ সালে মোদি যখন প্রথমবার ইসরায়েল সফরে যান, তখন থেকেই এই সম্পর্কের নতুন মাত্রা শুরু হয়। অনেক হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতাই খোলাখুলিভাবে বলেন, ‘ইসরায়েলের মতো করেই কাশ্মির সমস্যার ‘সমাধান’ করতে হবে-মানে জনবিন্যাস পরিবর্তন করে কাশ্মিরকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে সরিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় রূপান্তর করা।

আরও পড়ুনঃ  ঘুষকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় স্ত্রীকে তালাক দেন প্রকৌশলী, অতঃপর...

ইসরায়েলের ড্রোন, ভারতের যুদ্ধপরিকল্পনা: ভারতের আদানি গ্রুপ ২০১৮ সালে ইসরায়েলের ইলবিট সিস্টেমস-এর সঙ্গে যৌথভাবে হারমেস-৯০০-ড্রোন তৈরির কারখানা স্থাপন করে হায়দরাবাদে।

এসব ড্রোনের ৮৫ শতাংশ তৈরি হয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য এবং সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে এই ড্রোনগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়েছে। ভারতও ২০২৫ সালের মে মাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একই ড্রোন ব্যবহার করেছিল, কিন্তু পাকিস্তান সফলভাবে সেগুলো প্রতিহত করে।

ইসরায়েলের ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী মেইর মাসরি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ (১৮ জুন) আরবিতে লেখেন, ‘ইরানের পর, আমাদের লক্ষ্য পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচিকে ধ্বংস করা।’

এরপরই ইউরোপীয় থিঙ্কট্যাংক মডার্ন ডিপ্লোমেসি-তে ড. জুলিয়ান স্পেন্সার-চার্চিল একটি নিবন্ধে লেখেন, ইরানকে নিরস্ত করার পর, পাকিস্তান হবে ইসরায়েলের ‘কাউন্টার-প্রোলিফারেশন’ প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় এয়ার অ্যাটাক, ক্রুজ মিসাইল বা ড্রোন হামলা হতে পারে। এই হামলার সময় ভারত সামরিক আক্রমণে যুক্ত হয়ে পাকিস্তানকে ‘বাল্কানাইজ’ করতে চাইবে, যার মানে সিন্ধু ও পাঞ্জাবকে আলাদা করা, আর ‘আজাদ কাশ্মির’ দখল করে চীনকে গওয়াদর থেকে বিচ্ছিন্ন করা।’

আরও পড়ুনঃ  আত্মঘাতী হামলায় ১৩ সেনা নিহত, ভারতকে কঠিন হুঁশিয়ারি দিলো পাকিস্তান

কিন্তু পাকিস্তান কি চুপ করে থাকবে? না চলতি বছরের মে মাসের যুদ্ধে পাকিস্তান ভারতের সাতটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে, যার মধ্যে চারটি ছিল অত্যাধুনিক মাল্টিরোল রাফায়েল জেট। পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইরানের চেয়েও শক্তিশালী। আর পাকিস্তানের শাহিন-৩ ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরিসর দুই হাজার ৭৫০ কিমি, যা দিয়ে ভারত তো বটেই, ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা সম্ভব হবে।

হামিদ মির আরও বলেন,‘বলিউডে হয়তো জিততে পারে ভারত, বাস্তবে নয়’। তিনি স্পষ্ট করে বলছেন, ‘পাকিস্তান লেবানন নয়, গাজাও নয়, এমনকি ইরানও নয়। মোদি ও নেতানিয়াহু ভুল করছে। পাকিস্তানকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুক তারা।

ভারত-ইসরায়েলের যুদ্ধপরিকল্পনা কেবল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি পুরো দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করার অপচেষ্টা মাত্র। তবে পাকিস্তান জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মিরকে গাজা বানাতে দেয়া হবে না, এবং তারা প্রস্তুত রয়েছে যে কোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ