33.2 C
Dhaka
Friday, July 11, 2025

কফিনবন্দি হয়ে ফিরলেন ফখরুল ইসলাম, চোখের জলে ভেসে গেল শেষ বিদায়!

স্বপ্ন ছিল সামান্য—পরিবারের মুখে একটু হাসি ফোটানো। সেই স্বপ্ন নিয়েই বহু বছর আগে সৌদি আরবের পথে পা বাড়ান মো. ফখরুল ইসলাম। মদিনার রোদে পুড়ে, কর্মক্ষেত্রের ধুলায় গড়াগড়ি খেয়ে গড়ে তুলছিলেন প্রবাসী জীবনের কঠিন অধ্যায়। কিন্তু জীবনের গল্প শেষ হলো আচমকা, এক অবিশ্বাস্য পরিসমাপ্তিতে—হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন তিনি।

দীর্ঘদিনের প্রবাসজীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরলেন ঠিকই, তবে জীবন্ত নয়—ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে। যেন নিঃশব্দে বলে গেলেন, “আমি চলেছি, এবার বাকি গল্পটা তোমরাই বলো।”

শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের দারুল কুরআন মডেল মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় তাকে। চারপাশে ছিলো স্যালাইন ভেজা চোখ, নিঃশব্দ হাহাকার আর একরাশ আফসোস—যেন বাতাসেও শোক মিশে গিয়েছিল সেদিন।

আরও পড়ুনঃ  জুনে বিএনপি নেতার মৃত্যু হলেও আগস্টে হত্যা দেখিয়ে মামলা, এলাকায় চাঞ্চল্য

মো. ফখরুল ইসলাম ছিলেন ইসলাম পাটওয়ারী বাড়ির প্রয়াত আব্দুল হালিমের ছেলে। রেখে গেছেন স্ত্রী ও দুই সন্তান। জীবনের শেষ সময়টা কাটছিল মদিনায়। ১৩ জুন, এক শান্ত জুমার দুপুরে নামাজ শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে হঠাৎ স্ট্রোক করেন তিনি। সহকর্মীরা দ্রুত হাসপাতালে নিলেও ফিরিয়ে আনা যায়নি তাকে।

মরদেহ দেশে পৌঁছানোর পর তার বাড়িতে নামে শোকের ঢল। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ—কে ছিল না সেই ভিড়ে? একনজর দেখে নেওয়ার জন্য ভিড় জমায় শত শত মানুষ। কেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন, কেউ বা চোখ মুছছিলেন, কেউ আবার ফিসফিস করে বলছিলেন—“ভালো মানুষ ছিলেন, সত্যিই খুব ভালো মানুষ।”

আরও পড়ুনঃ  জামায়াতের সব জেলা–মহানগরে নতুন আমিরের নাম ঘোষণা, তালিকা দেখুন

প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর আলম যেন স্মৃতিচারণেই হারিয়ে গেলেন, “ফখরুল ভাই ছিলেন হাসিমুখের মানুষ। দেখা হলেই সালাম দিতেন, খোঁজখবর নিতেন। তাঁর মতো মানুষ এখন আর ক’জনই বা আছে?”

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা সাইয়েদ আহমদ। তিনি বলেন, “ফখরুল শুধু একজন প্রবাসী ছিলেন না, ছিলেন মদিনায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের এক অভিভাবকসুলভ বন্ধু। নতুন প্রবাসীদের আগলে রাখতেন, পাশে দাঁড়াতেন নিঃস্বার্থভাবে। তার চলে যাওয়া মানে যেন একটি যুগের অবসান।”

নবীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বেলায়েত হোসেন সোহেল বলেন, “ভাগ্য বদলাতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ফিরলেন জীবনের শেষ যাত্রায়। কারও কল্পনাতেও ছিল না এভাবে ফিরবেন তিনি। আজ গোটা এলাকা কাঁদছে একজন ভালো মানুষকে হারিয়ে।”

আরও পড়ুনঃ  পরিচয় জানা গেল ৪০০ কোটি টাকার সেই পিয়নের

ফখরুল ইসলামের মৃত্যু শুধু একটি জীবনের পরিসমাপ্তি নয়, যেন প্রবাস জীবনের কঠিন বাস্তবতার এক মর্মন্তুদ প্রতিচ্ছবি। হিসেব-নিকেশ করে কিছু রেখে যেতে পারেননি তিনি, রেখে গেছেন মানুষের ভালোবাসা, দোয়া আর শ্রদ্ধা।

চলে গেলেন নিঃশব্দে, রেখে গেলেন অগণিত স্মৃতি আর এক বুক শূন্যতা।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ