31.7 C
Dhaka
Friday, June 20, 2025

গুলি*বিদ্ধ হয়েও অনেকক্ষণ বেঁচেছিলেন শহীদ মাসুদ, হাস*পাতালে নিতে দেয়নি হায়েনারা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান মাসুদ (২১)। আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন সারা দেশের মতো ফেনীও উত্তাল। ৪ আগস্ট ২০২৪। আন্দোলনে অংশ নিতে সেদিন ফেনীর মহিপালে যান মাসুদ। মহিপাল ফ্লাইওভারের পাশে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার সঙ্গে জমায়েত হন তিনি। ওইদিন দুপুরের দিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অতর্কিত চারদিক ঘেরাও করে গুলি করতে থাকে। গুলিতে মারাত্মক আহত হন মাসুদ। তার বুকে দুইটি ও হাতে একটি গুলি লাগে। মহিপাল সার্কিট হাউজ রোডে পড়ে থাকে তার নিথর দেহ।

জানা গেছে, তখনও মাসুদ জীবিত ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে মাসুদের ছোট ভাই মাসুম আল সামীর তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন। ফেনীর দাগনভূঞা সদর হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রওনা হন। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন মাসুদকে ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে হাসপাতালে নিতে বাধা দেয়। তাকে যারা হাসপাতালে নেওয়ার সময় তাদের উপর হামলা চালায়। সেদিন তাকে সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে হয়ত প্রাণে বেঁচে যেতেন শহীদ মাসুদ।

আরও পড়ুনঃ  ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে ব্রাজিল

শহীদ সরোয়ার জাহান মাসুদ (২১) ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জয়লস্কর ইউনিয়নের মীর বাড়ির প্রবাসী শাহজাহান টিপুর ছেলে। তার ছোট ভাই সামীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভাইয়া শুরু থেকে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। অন্যান্য দিনের মতো সেদিন ভাইয়া আমার আগে আন্দোলনে অংশ নিতে ফেনীর মহিপাল অংশে চলে যায়। আমি পরে সেখানে গিয়ে ভাইয়ার সাথে দেখা করি। আমি মহিপাল ফ্লাইওভারের ওপরে উঠি, ভাইয়া নিচে ছিল। ওইদিন দুপুরের দিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অতর্কিত চারদিক ঘেরাও করে গুলি করতে থাকে। গুলির আওয়াজ শুনে ভাইয়াকে কল দিচ্ছিলাম কিন্তু ভাইয়া কল ধরছিল না। পরে সেখানে থাকা কেউ একজন কল ধরে বললেন ভাইয়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে আছেন। ভাইয়ার বুকে দুইটি ও হাতে একটি গুলি লাগে।

সামীর আরও বলেন, ভাইয়ার গুলি লাগার কথা শুনে তাৎক্ষণিক আমি এবং আরও কয়েকজন মিলে উদ্ধার করে দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। কিন্তু পথিমধ্যে দাগনভূঞার বেকের বাজার এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা গাড়ি থামিয়ে দেয়। ভাইয়াকে তারা রাজাকার বলে হাসপাতালে নিতে বাধা দেয়। এসময় তাদের পা ধরে কান্নাকাটি করেও রেহাই মেলেনি। এক পর্যায়ে তাদের অনেক অনুরোধ করার পর তারা আমাদের ছাড়ে। পরে ভাইয়াকে দাগনভূঞা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই।

আরও পড়ুনঃ  মেয়েটা মানসিক*ভাবে অসুস্থ ছিল, এমন ঘটনা ঘটাবে বুঝতে পারিনি

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সামির বলেন, সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় লাশ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখান থেকে বাড়িতে নিতে চাইলেও বাধা দেওয়া হয়। আমাকে পাকিস্তান বাজার এলাকায় আবারও মারধর করা হয়। পরে রাত ১টায় ভাইয়ার লাশ বুঝে পেলে রাতের মধ্যেই লাশ দাফনের নির্দেশ দেয়া হয়। সেদিন আমার ভাই বেঁচে ছিল সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে ভাইয়া হয়ত প্রাণে বেঁচে যেত।

মাসুদের চাচাতো ভাই মোরশেদুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মাসুদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমরা তাকে নিয়ে দাগনভূঞা নিয়ে গেলে বেকের বাজারের পথে আমাদের আটকে রেখে আমাদের উপর প্রচণ্ড মারধর করে। পরে হাসপাতালে পৌঁছালে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর পুলিশ আমাদের ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। আমরা সেখানে নিয়ে যাই। তখন পুলিশ বলে, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রেখে যেতে। তাই আমরা লাশ মর্গে রেখে ফিরে আসি। কিন্তু রাত ১টা নাগাদ যখন আমরা আবার মর্গে যাই, তখন দেখি সব শহীদের লাশ সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। কোনো উপায় না দেখে আমরা মাসুদের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাই।

আরও পড়ুনঃ  বিয়ের আসরে হঠাৎ হাজির প্রথম স্ত্রী, অতঃপর...

ছেলে হারানোর বেদনায় কাতর মাসুদের মা বিবি কুলসুম। এখনও শোক ভুলতে না পেরে আহাজারি করেন তিনি। বিবি কুলসুম বলেন, আমার ছেলে মানুষের জন্য কাজ করত। সামাজিক কাজে যুক্ত থেকে সবসময় মানুষের উপকারে নিজেকে নিবেদিত রাখত। কিন্তু তারা আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ