নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন অনেকে। করও মাথার ওপরই যেন বাস করার জন্য ছাদটুকু নেই, নেই কিছুই।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা প্রকাশ করেছে এমন কয়েকজনের বক্তব্য। তাঁরা বলছেন, জীবন নেই গাজায়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন কিনা তারও নিশ্চয়তা নেই। তবু যুদ্ধ থেমেছে এটুকুই স্বস্তি।
গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি মাহমুদ আনোয়ার আবু-সালেম গাজা শহরের শাতি শরণার্থী শিবিরে তিন মাস কাটিয়ে তাঁর এলাকায় ফিরে এসেছেন। তিনি আরও কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে একটি পাঁচতলা ভবনে থাকতেন। তবে সেই ভবন এখন ধ্বংসস্তূপ।
মাহমুদ বলেন, ‘ঘর, পুরো জিনিসটিই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আমার পরিবারের ৫০ জন লোক এখন রাস্তায় বাস করবে। স্কুলগুলোও ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানে কোনো জীবন নেই। এমনকি মসজিদও আঘাতে ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানে তাঁবু স্থাপন করাও কঠিন।’
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার সাথে সাথে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজাজুড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। কেউ কেউ উদযাপন করেন। অনেকে তাঁদের বোমা হামলার শিকার ঘরবাড়ির অবশিষ্টাংশ দেখতে থাকেন।
উত্তর গাজা শহরের একজন বাস্তুচ্যুত নারী যিনি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মধ্য দেইর এল-বালাহে আশ্রয় নিয়ে আছেন, তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে ১৫ মাস ধরে মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে আমি পান করার জন্য পানি পেয়েছি। আমি আবার জীবিত বোধ করছি।’
ওই নারী বলেন, ‘আমরা এখন সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করছি, যেদিন আমরা গাজা শহরে আমাদের বাড়িতে ফিরে যাব। ক্ষতিগ্রস্ত হও বা না হও, তাতে কিছু যায় আসে না, মৃত্যু এবং অনাহারের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।’
গাজা শহরের বাসিন্দা আহমেদ আবু আইহাম, যিনি দক্ষিণ খান ইউনিসে তাঁর পরিবারের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন; তিনি বলেন, তার নিজ শহরে ধ্বংসের দৃশ্য ভয়াবহ ছিল। যুদ্ধবিরতি জীবন বাঁচাতে পারে, তবে উদযাপনের সময় নেই।
আবু আইহাম বলেন, ‘আমরা যন্ত্রণায়, গভীর যন্ত্রণায় এবং এখনই সময় আমাদের একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে হবে।’
নানা ঘটনা শেষে ইসরায়েলের ৩ জিম্মিকে হামাসের পক্ষে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণার পর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করেছে ইসরায়েল। আজ রোববার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এ ঘোষণা দিয়েছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ১৫ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় গত ১৫ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল ও হামাস। যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে বলা হয়, গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনই ৭৩৭ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। আর এসব বন্দী মুক্তির বিপরীতে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে গাজার স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।
চুক্তি অনুযায়ী আজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা পিছিয়ে যায়। কারণ হামাস জিম্মি মুক্তির তালিকা প্রকাশ করতে বিলম্ব করে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণে প্রায় ১২০০ জন নিহত হন এবং আরও ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ইসরায়েল এর প্রতিক্রিয়ায় হামাসকে ধ্বংস করার জন্য গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। যুদ্ধে ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।