28 C
Dhaka
Friday, June 20, 2025

১৬ হাজার মেগা*ওয়াটেই হিমশিম, ১৮ হাজারে কী করবে বিদ্যুৎ বিভাগ!

আগামী গ্রীষ্মে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার সম্ভাব্য প্রক্ষেপণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রতি বছরই গ্রীষ্মের সঙ্গে সেচ এবং রমজানের বাড়তি চাহিদা যোগ হয়। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে সারা দেশে সাধারণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়। গেলো বছর গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ মেগাওয়াট নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিতরণ ব্যবস্থার বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহে লেজেগোবরে অবস্থা ছিল সাবেক সরকারের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের ১৬ হাজার মেগাওয়াটেই হিমশিম দশা ছিল। এবার সেখানে ১৮ হাজার মেগাওয়াটে কী করবে বিদ্যুৎ বিভাগ, তা-ই এখন দেখার বিষয়।

প্রসঙ্গত, গত বছর কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সংকটের কারণে গ্রীষ্মেই বন্ধ রাখতে হয়েছে কোনও কোনও কেন্দ্র। কয়লা ও ডলার সংকটে বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সরকার ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট, ডলার পরিস্থিতিতে নাজুক অবস্থার কথা তুলে ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ার কথাও জানিয়েছিল। তবে এবারও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দর একই অবস্থায় রয়েছে। ফলে গ্রীষ্মের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সিলমারা ব্যালটের ছবি ফেসবুকে পোস্ট ছাত্রলীগ নেতার

বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে একটু একটু করে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে শুরু করবে। ফেব্রুয়ারিতে সেচের জন্য অতিরিক্ত এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। এর বাইরে মার্চের শুরু থেকেই পবিত্র রমজান শুরু হবে। এই সময়েও বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হবে।

অর্থাৎ মার্চ থেকে বিদ্যুতের চাহিদা একধাপে অনেকটা বেড়ে যাবে। মার্চ থেকে টানা আগস্ট পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা একই রকম থাকে। এর মধ্যে এপ্রিল, মে ও জুনে সর্বোচ্চ চাহিদা তৈরি হয়, যা সামাল দেয়া বরাবরই কঠিন হয়ে পড়ে।

গত বছর মার্চ মাসের শুরুর দিন অর্থাৎ ১ মার্চ ওই মাসের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ৩৩৭ মেগাওয়াট। একই বছর এপ্রিলে ওই মাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ২৩ এপ্রিল ১৬ হাজার ২২৫ মেগাওয়াট। মে মাসে ওই মাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১ মে ১৬ হাজার ৪৩৫ মেগাওয়াট, জুন মাসে ওই মাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১২ জুন ১৫ হাজার ৭৭৮ মেগাওয়াট, জুলাই মাসে ওই মাসের সর্বোচ্চ ২৯ জুলাই উৎপাদন ছিল ১৫ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট এবং আগস্টে ওই মাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১ আগস্ট ১৪ হাজার ৬৮০ মেগাওয়াট।

আরও পড়ুনঃ  অন্তর্বর্তী সরকার উন্নত সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতবারের মতো এবারও বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি প্রায় একই রকম রয়েছে। কেবল পটুয়াখালীতে একটি ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র পরীক্ষামূলক উৎপাদনে এসেছে। গ্রীষ্মের মধ্যে কেন্দ্রটি তার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করবে। কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি। সাবেক সরকার দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধানে মনোযোগ না দিয়ে একতরফা আমদানিনির্ভর জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করায় প্রতি মাসে গ্রীষ্মে অন্তত এক বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি প্রয়োজন হয়। যে ব্যয় বহন করা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা বাড়তি চাহিদার কথা চিন্তা করে পরিকল্পনা করেছি। গ্রীষ্মের বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে হলে আমাদের যে পরিমাণ জ্বালানি অর্থাৎ গ্যাস, তেলের প্রয়োজন হবে সেসব আমরা ইতোমধ্যে জানিয়েছি। এখন জ্বালানির চাহিদা পূরণ হলে আমরা আশা করি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবো।

আরও পড়ুনঃ  লন্ডনে পৌঁছে*ছেন খালেদা জিয়া

এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, আগের সরকারের সময় থেকেই জনগণের মধ্যে এ নিয়ে চরম অসন্তোষ আছে। এবারও এই অসন্তোষ থেকে বের হওয়ার কোনও কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সরকার পরিবর্তনের ফলে আমরা আশা করেছিলাম, এই খাতে যে অন্যায়ভাবে ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে সেটি বের করা হবে। সরকার সেদিকে না গিয়ে তারা দাম বাড়ানোর দিকে এগোচ্ছে। তিনি বলেন, এখনকার অর্থনীতির একটি বড় অংশ নির্ভর করছে জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি করা এবং তার ওপর জনগণের স্বত্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করার ওপরে। যাতে মানুষ তার প্রয়োজনীয় পণ্য, জ্বালানি এবং জ্বালানিজাত পণ্য কিনতে পারে, সে ব্যবস্থা তো আমরা তৈরি করতে পারছি না।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ