26.9 C
Dhaka
Saturday, June 21, 2025

সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দাখিলে আরও ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব

সরকারি কর্মচারীদের প্রতি পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব দেওয়ার যে বিধান ছিল সেখানে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের বিদ্যমান আচরণ বিধিমালায় পরিবর্তনের মাধ্যমে এ প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিবর্তিত আচরণ বিধিমালাটি এরই মধ্যে ভেটিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) করেছে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ।

প্রস্তাবিত খসড়া বিধিমালাটি চূড়ান্ত করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর সরকারি গেজেট হবে। তারপরই এটি কার্যকর হবে।

প্রস্তাবিত খসড়ায় সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব ইস্যুতে আরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীদের আচরণ বিধিমালায় প্রতি পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব দেওয়ার যে বিধান ছিল সেখান থেকে সময়সীমা তুলে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ এটি কার্যকর হলে সরকারি কর্মচারীদের পাঁচ বছর পর পর সম্পদের হিসাব দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আর থাকবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পদের হিসাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সময়সীমা উঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আরও ছাড় পাবেন সরকারি কর্মচারীরা। এর মাধ্যমে দুর্নীতি আরও প্রসারিত হবে।

আরও পড়ুনঃ  ‘এই হাত দিয়ে কাউকে হত্যা করলাম, এটা ভেবে ঘুমাতে পারি না’

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সময়সীমা উঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মূলত সরকারি কর্মচারীদের আরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

সময়সীমা উঠিয়ে দিলে দুর্নীতি বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা সম্পদের হিসাব দিতে চান না এবং তারাই এসব সিদ্ধান্ত নেন। তারা তাদের নিজেদের স্বার্থেই এটা করছেন। এটাও একটা দুর্নীতি। এই দুর্নীতির মাধ্যমে দুর্নীতি আরও প্রসার হবে।

কেনাকাটা ও সেবাদানসহ সরকারি নানা খাতে দুর্নীতি হচ্ছে উল্লেখ করে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এর মূল কারণ হলো সরকারি কর্মচারীদেরকে সুযোগ করে দেওয়া। এক্ষেত্রে কোনোরকম দায়বদ্ধতা তাদের নেই।

এর আগে, ১৯৭৯ সালে সরকারি কর্মচারীদের প্রতি বছর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান চালু করা হয়। জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সরকারি চাকরি আইনের অধীনে থাকা সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালায় এ নিয়ম যুক্ত করা হয়। এ ধারা অনুযায়ী প্রতি বছর সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নিজ দপ্তরে জমা দেওয়ার বিধান ছিল।

আরও পড়ুনঃ  কারাগার থেকে ব্যারিস্টার সুমনের চিঠি, বললেন- দেখা হবে শিগগিরই

এরপর ২০০২ সালে বিধিমালা সংশোধন করে এক বছরের পরিবর্তে প্রতি পাঁচ বছর পরপর সরকারি কর্মচারীদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান করা হয়। যদিও চার দশক ধরে এই নিয়ম পুরোপুরি প্রতিপালন করা যায়নি।

নতুন আচরণ বিধিমালার খসড়ার ১০ বিধিতে বলা হয়েছে— প্রত্যেক সরকারি কর্মচারি চাকরিতে যোগদানের সময়, সরকার কর্তৃক, সময় সময় নির্ধারিত ফরমে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বা দখলে থাকা শেয়ার সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বিমা পলিসি এবং অলঙ্কারাদিসহ নগদ রূপান্তরযোগ্য সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা প্রদান করবেন।

বিদ্যমান বিধিমালায় পাঁচ বছর পরপর কর্মচারীদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। বিধিমালায় ‘সম্পত্তির ঘোষণা’ উপ-শিরোনামের ১৩ বিধিতে বলা রয়েছে— প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার অথবা তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বা দখলে থাকা শেয়ার, সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বিমা পলিসি এবং মোট পঞ্চাশ হাজার টাকা বা ততোধিক মূল্যের অলঙ্কারাদিসহ সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে সরকারের কাছে ঘোষণা দিতে হবে। এ ঘোষণায় নিচের বিষয়াদি উল্লেখ থাকবে:

আরও পড়ুনঃ  অবশেষে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনাকে নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলো ভারত

(১) যে জেলায় সম্পত্তি অবস্থিত ওই জেলার নাম। (২) পঞ্চাশ হাজার টাকার অধিক মূল্যের প্রত্যেক প্রকারের অলঙ্কারাদি পৃথকভাবে প্রদর্শন করতে হবে (৩) সরকারের সাধারণ বা বিশেষ আদেশের মাধ্যমে আরও যেই সমস্ত তথ্য চাওয়া হয়।

বিধিমালায় আরও বলা রয়েছে, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ডিসেম্বর মাসে উপবিধি ১-এর অধীনে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দেওয়া ঘোষণায় অথবা বিগত পাঁচ বছরের হিসাব বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস-বৃদ্ধি হিসাব বিবরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাখিল করতে হবে।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ