24 C
Dhaka
Thursday, February 20, 2025

আদালতে আজ যে পরিবেশ কাল তা থাকবে না: এজলাসে আমির হোসেন আমু

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ওয়াদুদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে ৬ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহম্মেদের আদালত এ আদেশ দেন।

পুলিশ ও রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের পক্ষে শুনানির পর, আমির হোসেন আমুর পক্ষে কে শুনানি করবে এ নিয়ে হট্টগোলে জড়ান আইনজীবীরা। এ সময় একজনকে জোর করে বের করে দেয়া হয়।

পরে আদালত আমুর বক্তব্য শুনতে চান। তখন আমির হোসেন আমু বলেন, আমি ঢাকা বারের সদস্য, হাইকোর্ট বারের সদস্য। এখানকার পরিবেশ দেখে দুঃখিত। এই পরিবেশে কিছু বলা উচিত না। মামলা চলবে, ভবিষ্যতে আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করব। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অনেক কথা বলেছেন। আমি একজন রাজনীতিবিদ আমাকে নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যে বক্তব্য রেখেছেন তা নিয়ে দুই ঘণ্টা বক্তব্য দেওয়া সম্ভব। আমি দুই মিনিটে কী বলবো!

তিনি আরও বলেন, আমরা একে অপরের ভাই-ভাই। মিলে-মিশে থাকা উচিত। আমরা একসঙ্গে থাকব। কেন দ্বন্দ্বে জড়াব? আশা করছি এ পরিবেশ থাকবে না।

আরও পড়ুনঃ  ১ খু*ন লুকাতে আরও ৬ খু*ন করেন ইরফান

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিপ আমুর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি বলেন, আমির হোসেন আমু ১৪ দলের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও সমন্বয়ক। তিনি কখনো চিন্তা করেননি হেলমেট পরে, হাতে হাতকড়া লাগিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। ক্ষমতায় থাকার আমরণ ট্যাবলেট খেয়েছিলেন বলে মনে করতেন। কিন্তু বিধাতা তা মানেননি। তিনি সবকিছু ঠিক করে দেন। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবকে বুঝিয়ে বাকশাল কায়েম করেন।

দল থেকে সিরাজুল ইসলাম, আ স ম রবদের বের করতে আমু-তোফায়েলের ভূমিকা ছিল। তাদের কারণে স্বাধীনতার পর দেশে জনগণের মধ্যে বিভাজন বিরাজ করে। তারা শেখ মুজিবকে স্বৈরাচার করতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। এক দলীয় বাকশাল কায়েমের মূল-হোতা আমু-তোফায়েল। বাংলার বাণী পত্রিকা ছাড়া আর কোনো পত্রিকা বের হতো না। জাসদ রাজনীতি করতে না পেরে অভ্যন্তরে চলে যায়। সিরাজ শিকদার বাম রাজনীতি করতো। তাকে হত্যা করা হয়। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা হয়। এরপর কি ঘটে সবাই জানেন। তবুও ষড়যন্ত্র থেমে নেই।

আরও পড়ুনঃ  সাবেক ওসি মঈনকে ছেড়ে দিলো পুলিশ

তিনি বলেন, এরপর ১৯৯১, ৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালে ক্ষমতার একটা পালাবদল চলে এলো। এরপর কি এমন হলে ১৫ বছর ভোটবিহীন থাকতে হবে। বাপকে যেভাবে বিপথে নিয়েছে, মেয়েটাকেও সেভাবে নিয়েছে আমু-তোফায়েলরা। হাসিনাকে বোঝাত, ততদিন বেঁচে থাকবেন ক্ষমতায় থাকবেন। ফ্যাসিস্ট তৈরিতে তাদের ভূমিকা রয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার লোক খুন, গুম হয়েছে। অনেকে দেশে থাকতে না পেরে মালয়েশিয়া-ইউরোপে চলে গেছে। দেশের স্বাধীনতা অন্যের কাছে বিকিয়ে দিয়েছে। দেশের রাজনীতি নষ্ট করার কৌশলীদের একজন আমু।

রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সময় তারা গণভবনে মিটিং করে। যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমানোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ফিলিস্তিনের গাজায় যেভাবে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়, আন্দোলনকারীদের ওপরও এভাবে গুলি চালায়। ৫ আগস্টের পর তার এলাকা ঝালকাঠিতে নিপীড়িত জনতা তার অত্যাচারের ইতিহাস তুলে ধরেছে। নিপীড়িত মানুষ তার বাড়িতে আগুন দেয়। সেখানে ৫ কোটি টাকা পাওয়া যায়। টাকার জাজিম বানিয়ে ঘুমাতেন। যেখানে যেতেন স্বর্ণের নৌকা ছাড়া উপহার নিতেন না। দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলেন। তার সহযোগীরাও পালিয়ে আছেন। হয়ত আস্তে আস্তে বের হয়ে আসবেন। এদের শাস্তি হোক। তাহলে আর ফ্যাসিস্টের জন্ম হবে না।

আরও পড়ুনঃ  ‘বাবা মাইরো না মাইরো না, আর করব না’ —আর্তচিৎকারের পরেও গলা কাটে আহাদ

এদিকে, তার বক্তব্য রাজনৈতিক বলে মন্তব্য করায় আইনজীবী স্বপন রায় চৌধুরীকে মারধর করে আদালত থেকে বের করে দেওয়া হয়। এসময় আদালতে কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ দেখা যায়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পরিস্থিতি শান্ত করেন। এরপর আমুর পক্ষে আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। পরে আদালত আমুর বক্তব্য শুনতে চান।

আমু তার বক্তব্য দেওয়ার পর পিপি ওমর ফারুক বলেন, যখন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন তখন কি খবর নিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা বারের। আইনজীবীরা তো ভালোই ছিল। কিন্তু নির্বাচনের সময় সিল মেরে ভোট নিয়ে গেছে, আইনজীবীদের মারধর করেছে। তখন তিনি কী ভূমিকা নিয়েছিলেন। পরে আমু বলেন, প্রথমবার যখন গোলমাল হয় আমি এর বিরোধিতা করি। ভোট দিতে আসিনি, বয়কট করেছি।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ