29 C
Dhaka
Monday, February 17, 2025

‘বাবার কথা মনে হলে কলিজা ফেটে যায়’

‘বাবার চেহারা আবছা আবছা মনে আছে, পরিষ্কার মনে নাই। বাবার কথা যখন কেউ জিজ্ঞেস করে তখন কলিজা ফেটে যায়। সব সময় বাবার কথা মনে পরে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে খুঁজতে বের হতে পারিনি। ইদানীং বাবার কথা খুব বেশি মনে পরছিল।

বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে বাবার প্রসঙ্গ উঠলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মুখে কটু কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমি তো জারজ সন্তান নই। আমারতো বাবা আছে। বাবাতো কত বছর আমাদের সঙ্গে ছিলেন, আমার নানা বাড়ি এলাকায় থেকে ব্যবসা করেছেন। কত মানুষ চেনে তাকে। বাবাকে খুঁজতে এই প্রথম চাটমোহরে এসেছি।’

কথাগুলো বলতে বলতে বার বার কান্নায় ভেঙে পরেন নড়াইল থেকে পাবনার চাটমোহরে বাবাকে খুঁজতে আসা রূপা খাতুন (২৫) নামের এক তরুণী। এই তরুণী চাটমোহরের বিভিন্ন এলাকায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন তার বাবাকে। গত ২ জুলাই বিকেলে চাটমোহর উপজেলা গেট এলাকায় দেখা যায় মেয়েটিকে। রুপা নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার ছোট কালিয়া এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম নুর ইসলাম মোল্লা।

আরও পড়ুনঃ  অসহযোগ আন্দোলন : যা করা যাবে, যা করা যাবে না

রুপা জানান, মা, মামাদের কাছে শুনেছি এখন থেকে প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে তার বাবা চাটমোহরের নুর ইসলাম মোল্লা নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার শুক্তগ্রামে যান। ওই গ্রামের গফফার আলী নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক স্থাপন করে গফফার আলীর আশ্রয়ে বসবাস শুরু করেন। দুই-তিন বছর গফফার আলীর বাড়িতে বসবাস করেন নুর ইসলাম মোল্লা।

গফফার আলীর বাড়িতে বসবাস করার সময় ছোট কালিয়া গ্রামের আলতাব মোল্লার মেয়ে রহিমা বেগমকে (রুপার মা) বিয়ে করেন। বিয়ের পর আলতাব মোল্লার বাড়িতে স্ত্রীসহ বসবাস করতে থাকেন। এলাকায় একটি কাচা মালের (সবজী) দোকান দেন তিনি। বড় কালিয়া এলাকায় ছয় শতাংশ জায়গাও কেনেন। নুর ইসলাম মোল্লা এবং রহিমা বেগমের সংসারে রুপা খাতুন এবং নুরজাহান নামে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ভালোই কাটছিল তাদের দিন।

আরও পড়ুনঃ  ২৮ অক্টোবর: লগি-বৈঠা আন্দোলনে মানুষ মেরে লাশের ওপর নৃত্য করেছিল সেদিন

শুক্তগ্রাম, ছোট কালিয়া ও বড় কালিয়া এলাকায় ১৪-১৫ বছর বসবাসের পর রুপার যখন চার বছর এমন সময় একদিন বাঁধাকপি বিক্রি করতে খুলনায় যান নুর ইসলাম মোল্লা। এটি প্রায় বিশ বছর আগের কথা। বাঁধাকপি বিক্রির পর আর বাড়িতে ফেরেননি তার বাবা। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ-খবর করেও তার মা, মামারা তার বাবার সন্ধান পাননি।

অভিমানে রহিমা বেগমও কখনও স্বামীকে খুঁজতে আসেননি চাটমোহরে। তারা শুধু এটুকু শুনেছেন নুর ইসলাম মোল্লার বাড়ি চাটমোহরের দিয়ার বা দিয়ারা বা এমন নামের কোনো এক গ্রামে। রহিমা বেগম তার মেয়ে রুপা ও নুরজাহানকে নিয়ে ভাইয়ের আশ্রয়ে রয়েছেন। দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  সমন্বয়কদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে জবির মাসুদ রানার পদত্যাগ

রুপা জানান, বাবার বয়স এখন ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হবে। পাঁচ ফিট ছয় ইঞ্চির মতো লম্বা হবে। মুখে ছোট ছোট হালকা চাপ দাড়ি ছিল। বাবার কোন ছবিও নেই তাদের কাছে। বাবা আমার মা, মামাকে চাটমোহরে বাড়ি বলেছে এটা সত্য না মিথ্যা তাও আমাদের জানা নেই। বাবা বেঁচে আছেন না মারা গেছেন তাও আমরা জানি না। যতদূর শুনেছি আমার দাদার নাম আব্দুল মোল্লা। বাবাকে খুঁজে না পেলে মনে হচ্ছে আমিই মরে যাই। রুপা তার বাবাকে খুঁজে পেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ