30 C
Dhaka
Thursday, February 20, 2025

শেখ হাসিনা: মৃত্যু দুয়ার থেকে ফিরে দুর্দমনীয় এক চরিত্রে

শেখ হাসিনা। গৃহবধূ থেকে ঘটনার পালাক্রমে রাজনীতির মূল মঞ্চে। ট্র্যাজেডির ভেতর দিয়ে একটু একটু করে করেন শক্তি সঞ্চয়। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে নিয়ে আসেন ক্ষমতায়। মাঝে ছন্দপতন। এরপর মৃত্যু দুয়ার থেকে ফিরে দুর্দমনীয় এক চরিত্রের প্রকাশ ঘটান। যা তাকে ধীরে ধীরে একরোখা ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। তকমা লাগে স্বৈরাচারের।

সোমবার (৫ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণভবন অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে আছেন ছোট বোন শেখ রোহানাও।

শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন, দেশ ছেড়ে যাবেন না। কোনো অবস্থাতেই না। কিন্তু নিয়তি শেখ হাসিনাকে এমন অবস্থায় দাঁড় করালো। গড়িমড়ি করে পদত্যাগ করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে হেলিকপ্টারে পালাতে হলো। ক্ষমতা ছেড়ে গেলেন সেনাবাহিনীর কাছে।

আরও পড়ুনঃ  অসুস্থ আমীর হামজা কাউকে চিনতে পারছেননা

২০০৯ সালে এরকম এক সেনা-সমর্থিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে মসনদে ফেরে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। শাসনভার নেয়ার বছরই পিলখানা ট্রাজেডি সংকটে ফেলে আওয়ামী লীগকে। সেবার তা সামাল দেন তিনি। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনায় ২০১১ সালে বাতিল করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।

যা নিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বিরোধীরা। তবে ২০১২ সালে মিয়ানমারে গণহত্যা থেকে বাংলাদেশে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসায় ভাসেন শেখ হাসিনা।

২০১৩ সালে বিচার শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের। ফাঁসি ও কারাদণ্ড দেয়া হয় জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বদের কয়েকজনকে। এ সময় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের বিপরীতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে নামেন কওমী মাদরাসা ঘরানার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও রাজনীতিকরা। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়ায় গোটা দেশে। তাদেরও শক্ত হাতে দমন করেন তিনি। রাজনৈতিক বিরোধীদের পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরও কোণঠাঁসা করেন শেখ হাসিনা। নোবেলজয়ী ড. ইউনূসকে অর্থপাচার মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি শুরু হয়।

আরও পড়ুনঃ  পাঠ্য*বই ছাপানোর কাগজ নেই!

তার এক রোখা সিদ্ধান্তে ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে বাইরে রেখেই জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে টানা ২য় বার প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সে মেয়াদে জঙ্গি হামলা কাঁপন ধরায় দেশবাসীর মনে। সেটিও জঙ্গিবিরোধী নানা অভিযানের মাধ্যমে দমন করা হয়।

একইসঙ্গে কঠোরভাবে দমন করা হয় বিরোধী রাজনীতি। বিশেষ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা, কারাগারে পাঠানোসহ নানারকম মারপ্যাঁচে নাকাল হয় বিএনপি। বিশেষ করে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দুর্নীতি মামলায় আদালতে যাওয়া-আসা করতে করতেই ২০১৮ সালে শেষ পর্যন্ত কারাগারেই যেতে হয় তাকে।

আরও পড়ুনঃ  আ’লীগ নেতার নির্দেশে মন্দিরের সামনে বোমা বিস্ফোরণ- ঘটনাস্থলে আটক দু’জনের স্বীকারোক্তি

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতাকে কারাগারে রেখেই বিতর্কিত এক নির্বাচনে যায় ক্ষমতাসীনরা। এতে তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করেন। দেশে-বিদেশে এই নির্বাচনের জন্য চরম সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তার দল আওয়ামী লীগ। কিন্তু সে সবের থোড়াই কেয়ার করা হয়। আগের দুই মেয়াদের মতোই ভিন্নমত ও বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন থাকে অব্যাহত।

শুধু যে বিরোধীমত ও রাজনীতিকদের দমন তা নয়, দলেও একচ্ছত্র অবস্থান ধরে রাখেন তিনি। এতে প্রবীন ও শক্তিশালী রাজনীতিবিদদের সরিয়ে নিজের পছন্দমতো লোকদলের শীর্ষ নেতৃত্বে নিয়ে আসেন। সহযোগী সংগঠনেও বজায় থাকে সেটি।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ