29 C
Dhaka
Saturday, October 18, 2025

আমরা রোজা আছি বলায় তারা কিছু করেননি : এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন

এমভি আব্দুল্লাহর ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ বলেছেন, জলদস্যুরা যখন আমাদের জিম্মি করেছিল তখন আমি হাত তুলে সারেন্ডার করে বলেছিলাম আমরা বাংলাদেশি মুসলিম, আমরা রোজা আছি। এ কথা বলায় তারা আর কিছু করেননি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে পৌঁছে কথাগুলো বলছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ।

তিনি বলেন, সোমালিয়ার দস্যুদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আজ আমরা এখানে পৌঁছাতে পেরেছি। আমরা ২৩ নাবিকই পৌঁছাতে পেরেছি। আমাদের সরকার কৌশলগতভাবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমি বলেছিলাম বিদেশি নৌবাহিনী যেন ভায়োলেন্স না করে, যাতে আমাদের নাবিকদের কারও প্রাণ না যায় বা জাহাজের কোনো ক্ষতি যেন না হয়। আমি আমাদের নৌবাহিনীপ্রধানকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা সবাই সুস্থ ও অক্ষতভাবে পরিবারের কাছে ফিরতে পেরেছি। এ এমন অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

আরও পড়ুনঃ  ডিসি অফিসে চাকরির ভাইভা দিতে এসে আটক ২২ পরীক্ষার্থী!

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন বলেন, প্রথম দিন যখন আমরা দস্যু দ্বারা আক্রান্ত হলাম, তখন সেকেন্ড অফিসার ব্রিজে ছিলেন। আমি নিচে নেমে অ্যালার্ট দিচ্ছিলাম। সবকিছু অতি দ্রুত ঘটছে। দস্যুরা স্পিডবোটে এসে জাহাজে ওঠে ব্রিজে চলে আসে। আমি আর সেকেন্ড অফিসার আমাদের হিডেন রুমে যেতে পারিনি। সেকেন্ড অফিসার আটক হওয়ার পর আমি গিয়ে দেখি একে-৪৭ তাক করে আছে তার দিকে। আমি যেতেই আমার দিকেও একে-৪৭ তাক করে।

জিম্মির এক মাস কেমন কেটেছে জানালেন নাবিকরা
মৃত্যুর হুমকির কথা উল্লেখ করে ক্যাপ্টেন বলেন, ‘আমাদের নাবিকদের কেউ কেউ কান্নাকাটি করেছিল। আমিও জীবনে প্রথম এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। মনে ভয় ছিল, কিন্তু বডি ল্যাঙ্গুয়েজ স্বাভাবিক রেখেছি। সবাইকে হ্যান্ডেল করে, যেন আমাদের কোনো ক্রুর কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রেখেছি। সেফটি অব লাইফটাকে প্রাধান্য দিয়েছি।’

আরও পড়ুনঃ  এবার হিরো আলমকে নিয়ে স্ত্রী রিয়ার বিস্ফোরক মন্তব্য

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ডেক ক্যাডেট সাব্বির। নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে মৃত্যু আতঙ্কে। কখন কী হয়, পরিবারের সদস্যদের আর দেখতে পাব কি না তা নিয়েই ভাবতাম জিম্মি থাকাকালীন প্রতিটি সময়। যখন মুক্তির খবর পাই, তখন মনে শান্তি আসে। সোমবার সন্ধ্যায় আমাদের নিয়ে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর কুতুবদিয়ার সমুদ্র উপকূলে নোঙর করে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে আমরা বন্দর জেটিতে পৌঁছেছি। সবার পরিবারের লোকজনই এসেছেন। কতটা যে ভালো লাগছে বলে বোঝানো সম্ভব নয়।’

এর আগে, সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যা ৬টায় এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপকূলে নোঙর করে। গত ৩০ এপ্রিল ভোর ৪টার দিকে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর থেকে ৫৬ হাজার টন চুনাপাথর নিয়ে দেশের পথে রওনা দেয়।

আরও পড়ুনঃ  আদালতে হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না বিএনপি-জামায়াতের ২ নেতার

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কেএসআরএম গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হারমিয়া বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুর কবলে পড়ে। প্রায় এক মাস পর গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় মুক্তিপণের বিনিময়ে জাহাজসহ ২৩ নাবিক মুক্তি পায়।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ