31 C
Dhaka
Friday, October 17, 2025

অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতাই কি দেশে ফেরাবে শেখ হাসিনাকে?

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন তিনি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এক সময় সরকার পতন আন্দোলনে রূপ নেওয়ার পর ঘটে এই অভ্যূত্থান, যার রেশ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। আন্দোলনে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং আরও কয়েক হাজার আহতের ঘটনার জন্য দেশের জনগণ প্রধানত দায়ী করেছে শেখ হাসিনাকে। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাকে আসামি করে দেশজুড়ে দায়ের করা হয়েছে শতাধিক হত্যা মামলা। এক কথায় শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলন বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে শেখ হাসিনার চরম নেতিবাচক একটি ভাবমূর্তি তৈরি করেছে।

শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকে আওয়ামী লীগ কার্যত নিষ্ক্রিয়। ইতোমধ্যে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। সেই সরকার এবং সরকারের সমর্থকরা তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখী করতে চাইছেন। তবে ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তাতে এই মুহূর্তে তাকে দেশে ফেরত আনা যে প্রায় অসম্ভব, তা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও সরকারের সমর্থকরাও জানেন।

শেখ হাসিনা যখন দেশ ত্যাগের পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ সবার মধ্যে এমন একটি ধারণা দৃঢ় ছিল যে ৭৫ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বাকি জীবন কাটবে নির্বাসিত অবস্থাতেই। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী ফলাফল দেশে-বিদেশে শেখ হাসিনার এমন নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার ফেরা আর সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুনঃ  পারিবারিক নৃশংসতা শিশু হামিম আর কখনও বাবা ডাকতে পারবে না

তবে সম্প্রতি এই ধারণা বা বিশ্বাস ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাওয়ার অবস্থাও তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতির যে নেতৃত্বশূন্যতা, সেটিই এক সময় শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে আসার পথ এবং রাজনীতি করার সুযোগ তৈরী করে দেবে।

নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষক এবং বাংলাদেশের নাগরিক মোবাশ্বের হাসান এ প্রসঙ্গে টাইম সাময়িকীকে বলেন, “বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকার বৈধতা রয়েছে, জনসমর্থনও রয়েছে; কিন্তু এই সরকার নির্বাচিত কোনো সরকার নয়। এই সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই। শেখ হাসিনা যদি চান, তাহলে এই দুর্বলতাকে ব্যবহার করে এক সময় দেশে ফিরে আসতে পারবেন। এটা কেবলই সময়ের অপেক্ষা।”

যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা উইলসন সেন্টারের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যানও এমনটা মনে করেন। টাইম সাময়িকীকে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন শুধু সম্ভবই নয়, খুবই সম্ভব। কারণ পরিবারতন্ত্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। যুগ যুগ ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় এটি চলে আসছে। মাত্র একটি বাংলাদেশে এই সংস্কৃতির অবসান ঘটবে— এমনটা প্রত্যাশা করা যায় না।”

আরও পড়ুনঃ  ‘মরার ভান করে শুয়ে ছিলাম, পুলিশ বলল এ এখনো ম*রে নাই’

“তারপরও হয়তো বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যেতো, যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হতো। কিন্তু দেশটির যে রাজনৈতিক বাস্তবতা, তাতে এটি একেবারেই সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ এখনও বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল।”

বাংলাদেশের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান টাইম ম্যাগাজিনকে এ প্রসঙ্গে বলেন, “যে পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা দেশ থেকে বিদায় নিয়েছেন এবং তার চলে যাওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কোনো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকবে— তা একেবারেই ভিত্তিহীন কল্পনা।”

“তবে এই সরকার যদি সার্বিকভাবে ভেঙে পড়ে, তাহলে যে কোনো কিছুই সম্ভব।”

এবং এই সরকারের ভেঙে পড়ার আশঙ্কা বেশ ভালোভাবেই রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশেল সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক শহীদুল হক। টাইম ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। পনের বছর অনেক দীর্ঘ সময়। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের পুরো আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনকে নিজের মতো করে সাজিয়েছে দলটি। বর্তমান সরকার কয়েকজন চিহ্নিত আমলা ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পুরো প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো এই সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।”

আরও পড়ুনঃ  যেভাবে ব্যারিস্টার সুমনকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ

“তাছাড়া প্রশাসন ঢেলে সাজাতে গেলে আমলাতন্ত্রের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে। অন্তর্বর্তী সরকার পারতপক্ষে কোনোভাবেই এ ঝুঁকি নিতে চাইবে না। এই প্রশাসন এবং আমলাতন্ত্রই আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে ফের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনবে।”

শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন, তার মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি গুঞ্জন উঠেছে যে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তিনি দলের হাল ধরবেন। তিনি সত্যিই এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না— জানতে চাইলে টাইম ম্যাগাজিনকে জয় বলেন, “আমার কখনওই রাজনৈতিক উচ্চকাঙ্ক্ষা ছিল না; কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে ভবিষ্যতে কী হয়— তা কে বলতে পারে? আমি এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিই নি।”

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ