এ যেন রূপকথার গল্প। সাহারা মরুভূমিতে বন্যা। বিরল ও নাটকীয় এমন ঘটনার সাক্ষী হল পশ্চিম আফ্রিকার অধিবাসীরা। সামনে আসছে বন্যার অবাক করা সব দৃশ্য। যা দেখে হতভম্ব বিশ্ববাসী।
খবরে বলা হয়েছে, গত মাসে মরক্কোর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মাত্র দুই দিনের টানা বৃষ্টিপাতের ফলে ব্যাপক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিরল এই ঘটনার বেশ কিছু স্যাটেলাইট ছবি চলতি সপ্তাহে সামনে এসেছে। যা দেখে অনেকেরই চোখ কপালে।
পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম মরুভূমি সাহারার শুষ্ক অঞ্চলে বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। বন্যা তো অনেক পরের কথা। এই অঞ্চলে সবশেষ ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যা হয়েছিল এখন থেকে প্রায় অর্ধশতক থেকে। অর্থাৎ ৫০ বছর পর প্রথমবারের মতো এখানে পানির স্রোত দেখা গেল।
মরক্কোর আবহাওয়া সংস্থার বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানী রাবাত থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার (২৮০ মাইল) দক্ষিণে তাগুনাইত এলাকায় মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের (৩.৯ ইঞ্চি) বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
আর দুই দিনের বৃষ্টিপাত বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতকেও ছাড়িয়ে যায়। ওই অঞ্চলে বার্ষিক ২৫০ মিলিমিটারের (১০ ইঞ্চি) মতো বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির সেই পানি রূপ নেয় ব্যাপক বন্যায়। বন্যার পানি বয়ে যায় সাহারার উষ্ণ বালির মধ্যদিয়ে। যার হৃদয়গ্রাহী চিত্র ধরা পড়েছে ছবিতে।
প্রতিবেদন মতে, ১০ সেপ্টেম্বর নাসার স্যাটেলাইটে ধরা পড়ে সাহারায় প্রবহমান বন্যার পানির চিত্র। পর্যবেক্ষকদের মতে, মরক্কোর দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের জাগোরা ও টাটার মধ্যবর্তী ইরিকু হ্রদের তলদেশ গত ৫০ বছর ধরে শুকনো ছিল। সেই হ্রদ ভরে যায় বন্যার পানিতে।
মরক্কোর আবহাওয়া সংস্থার এক কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে এত ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা গত ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দেখা যায়নি।’ এই বৃষ্টিপাত মরুভূমির নিচে বিশাল ভূগর্ভস্থ পানির স্তরগুলো পুনরায় পূরণে সহায়তা করবে। এই পানির ওপর মরুভূমির বিভিন্ন সম্প্রদায় নির্ভরশীল।
গত ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর একটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাহারার বৃক্ষহীন উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটে। ওই বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় মরক্কোয় ১৮ জনের মৃত্যু হয়। মরক্কোর দক্ষিণ-পূর্বে দেয়া জলাধারগুলো নজিরবিহীনভাবে পানিতে পূর্ণ হয়ে যায়।
সাহারা মরুভূমি আফ্রিকার উত্তর, মধ্য ও পশ্চিমে ৯০ লাখ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে সৃষ্ট চরম আবহাওয়া এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ক্রমাগত হুমকির মুখে ফেলছে। এমন পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ধরনের ঝড় ভবিষ্যতে সাহারা অঞ্চলে আরও ঘন ঘন হতে পারে।