রাজধানী ঢাকায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক মন্তব্য করেছেন যে, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে সন্ত্রাসীরা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা রাজধানীতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা, মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদাবাজি করছে। চাঁদা না দিলে তারা গুলি ও বোমা মেরে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এবং প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছে। গত তিন মাসে ১০টি ঘটনার মধ্যে ইমন, সুব্রত, হেলাল এবং সুইডেন আসলামসহ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। সম্প্রতি সময় সংবাদে প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
একটি ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধানমন্ডি ৭ নম্বরের এ-তে সাত থেকে আটটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর, ৫ থেকে ৬ জন যুবক এসে যোগাযোগ করতে একটি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে যান। ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে পুলিশের খাতায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের পরিচয়ে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।
চাঁদা না দিলে পুলিশি পাহারা বসালে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তারা ভবনের সামনে এসে দরজা খুলে ফাঁকা গুলি করে এবং পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১০ জানুয়ারি এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান মার্কেটের সামনে দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। এখানে ইমনের নাম উঠে আসলেও আহতদের দাবি, জড়িত কেবল ইমন।
রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারের দুটি দোকান দখলের চেষ্টা করে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। মাঝে মাঝে তার লোকজন মহড়া দিচ্ছে।
রূপনগরের রিও ফ্যাশনের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। ভুক্তভোগীরা সন্ত্রাসীদের উৎপাতের কথা জানাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: পুলিশের হস্তক্ষেপে কারওয়ান বাজার থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়া হলো
সম্প্রতি এক চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করতে গেলে এক পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করা হয়। গত তিন মাসে ১০টি ঘটনার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ধানমন্ডি, মগবাজার, মোহাম্মদপুর, মিরপুর এবং মতিঝিলের অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করছে ইমন, সুব্রত বাইন, পিচ্চি হেলাল, কিলার আব্বাসসহ আট থেকে দশ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী। যদিও কয়েকজন সহযোগী গ্রেফতার হয়েছে, তবে তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এ বিষয়ে ডিএমপির গণমাধ্যম বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, কিছু গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে এবং তারা আরও তথ্য সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, “যে যতই চেষ্টা করুক না কেন, আমরা তাদের আইনের আওতায় আনায় বদ্ধপরিকর।”
সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দমন করতে তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো যেন শীর্ষ পর্যায়ের সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয় বা রাজনৈতিকভাবে যে সহযোগিতা, সেগুলো না দেয়।”
এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সন্ত্রাসীদের ধরতে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেন তিনি।