রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ৭ শিক্ষার্থী বদলির প্রতিবাদে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে তেজগাঁও সাতরাস্তা এলাকায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় ১ ঘণ্টা পর তারা সড়ক ছেড়ে দেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে তারা ছয় দফা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরই জেরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৭ জন নেতৃস্থানীয় শিক্ষার্থীকে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয়েছে।
বদলির তালিকায় রয়েছেন: মো. মাসফিক ইসলাম (সিভিল), জুবায়ের পাটোয়ারী (সিভিল), নাহিদ আলম আসিফ (সিভিল), মো. রেজওয়ান রহমান (এনভায়রনমেন্টাল), আসরাফুল ইসলাম (আর্কিটেকচার), মো. সোহান (ইলেকট্রিক্যাল) ও মিফতাহুল আসফাক মোস্তাক (সিভিল)।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা আমাদের কারিগরি মানোন্নয়নের যৌক্তিক দাবি জানিয়েছি। এটা শুধু আমাদের জন্য নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন হবে। দেশে দক্ষতাপূর্ণ মানুষ তৈরি হবে। অথচ এই যৌক্তিক দাবি জানানোর জন্য আমাদের সাত জন সমন্বয়ককে ঢাকা পলিটেকনিক থেকে অন্য ইনস্টিটিউটে বদলি করা হয়েছে। যাতে করে ছয় দফা দাবি দামাচাপা দেওয়া যায়।
জানা যায়, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বৈষম্যবিরোধী কয়েকজন সমন্বয়ক ছয় দফা দাবিতে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবি আদায়ে গত ৯ জানুয়ারি রাতে তারা তেজগাঁও সাতরাস্তা অবরোধ করেন। প্রায় ৪ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ ও পলিটেকনিক কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে সড়ক ছেড়ে যান।
এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, আমি বদলির আবেদন করিনি, তবুও আমাকে বদলি করা হয়েছে। আমাদের মতামত না নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় আমাদের টার্গেট করা হয়েছে। আমরা হলের সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, তাই আমাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইয়াসমিন বলেন, সাতজন শিক্ষার্থীকে অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয়েছে, যা আমাদের আন্দোলনকে স্তব্ধ করার চেষ্টা মাত্র। বদলি বাতিল না করলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
এ বিষয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাজী শামীমুর রহমান বলেন, ‘গত কিছু দিন ধরে কিছু দাবি নিয়ে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছে। তাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সরকারি বিভিন্ন কারিগরি ইনস্টিটিউটে বদলি করার প্রতিবাদে তারা ক্যাম্পাসের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তবে সড়ক অবরোধ করে নাই। তারা প্রায় ১ ঘণ্টা বিক্ষোভ মিছিল করে রাত ১২টার মধ্যে যার যার হলে চলে গেছে।’
এ বিষয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এই শিক্ষার্থীরা দুই মাস আগে আমার ওপর হামলা চালিয়েছিল। প্রশাসনিক কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নয়। অতীতে তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। এখন আবার অন্য নামে আন্দোলন করছে।
শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি
কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত কোনও জনবল না রাখা, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স ৪ বছর মেয়াদি করা এবং প্রতি সেমিস্টার পূর্ণ মেয়াদের ৬ মাস করা, ২০২১ সালের বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইন্সট্রাক্টরদের কারিগরি অধিদফতর এবং সব প্রতিষ্ঠান থেকে অপসারণ করা, কারিগরি সেক্টরে সব শূন্য পদে কারিগরি জনবল নিয়োগ দ্রুত সম্পূর্ণ করা, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের সব নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করা এবং উপসহকারী প্রকৌশলী ১০ম গ্রেড পদে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যতীত অন্য কাউকে আবেদনের সুযোগ না দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের পরিচালক প্রকৌশলী মো. আনোয়ার কবীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রকৌশল-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রমের ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের অন্তর্ভুক্ত সাত শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির প্রশাসনিক শর্তাবলী ও নিরাপত্তা নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।