পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে একটি আত্মঘাতী হামলায় দেশটির সেনাবাহিনীর ১৩ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় ভারতকে দায়ী করার পাশাপাশি তাদের উদ্দেশে কঠিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির।
তিনি বলেছেন, ভারত-সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অসীম সাহসিকতা দেখিয়েছে এবং পুরো জাতি এই লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ। হামলাকারী এবং তাদের মদদদাতাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
রোববার (২৯ জুন) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বলছে, এই হামলার পেছনে ভারতের ‘রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা’ এবং ভারত-সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ফিতনা আল-খারিজ’ জড়িত। তাদের বিবৃতি অনুযায়ী, একটি বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি দিয়ে সেনাবাহিনীর একটি কনভয়কে লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। প্রথম সারির দল হামলাকারীকে শনাক্ত করে থামাতে পারলেও হামলাকারী একটি গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ১৩ জন সেনা সদস্য নিহত হন। এই হামলায় তিনজন বেসামরিক ব্যক্তিও গুরুতরভাবে আহত হন। তাদের মধ্যে দুই শিশু ও এক নারী রয়েছেন।
হামলার পর অভিযান চালিয়ে ১৪ জন ‘খারিজি’ জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অভিযানের মাধ্যমে তারা পুরো এলাকাটি সুরক্ষিত করেছে এবং এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং আইএসপিআরের ভাষ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও তাদের জনগণ ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত জঙ্গি কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। নিহত সেনা সদস্য ও আহত নিরীহ নাগরিকদের আত্মত্যাগ এই প্রতিশ্রুতি আরও শক্তিশালী করেছে।
এদিকে হামলার ঘটনার পর পেশোয়ার কর্পস সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। সেখানে তিনি বলেন, ভারত-সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অসীম সাহসিকতা দেখিয়েছে এবং পুরো জাতি এই লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, যারা এই হামলা করেছে, তাদের এবং তাদের মদদদাতাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সেনাপ্রধান আরও বলেন, কেবল সেনাবাহিনী নয়, বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিও জরুরি। বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখাওয়ার পুলিশকে আরও দক্ষ করতে হবে এবং সেনাবাহিনী তাদের পাশে থাকবে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জারদারি বলেন, শহীদরা আমাদের প্রকৃত নায়ক, তাদের আত্মত্যাগ জাতি কোনোদিন ভুলবে না। সন্ত্রাসবাদ সম্পূর্ণ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসীরা কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে। জাতি শহীদদের স্যালুট জানায়।
অবশ্য, পাকিস্তানে প্রাণঘাতী এই হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে ভারত। রোববার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওয়াজিরিস্তানে শনিবারের হামলার জন্য ভারতকে দায়ী করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দেওয়া বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করছে তারা।