33 C
Dhaka
Saturday, March 15, 2025

শিমুলের জবানবন্দিতে উঠে এলো আনার হত্যার রহস্য

ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন শিমুল ভূঁইয়া। সেই জবানবন্দি ও ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের তিন কারণ।

বুধবার (৫ জুন) দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে শিমুল ভূঁইয়াকে আদালতে হাজির করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিএমপির ওয়ারী গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) তোফাজ্জল হোসেন শিমুলের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে এ হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিনজনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

শিমুলের আগে মঙ্গলবার (৪ জুন) আদালতে জবানবন্দি দেন তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পেশাদার অপরাধী শিমুলের সঙ্গে তানভীরও এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। আনারকে তিনি বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করেন। এর আগে গত সোমবার (৩ জুন) আদালতে জবানবন্দি দেন শিলাস্তি রহমান। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি সংসদ সদস্যকে কলকাতার নিউ টাউনে সঞ্জীবা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটে রিসিভ করেন বলে স্বীকারোক্তি দেন।

আরও পড়ুনঃ  গোপালগঞ্জ থেকে নিয়োগ পাওয়া আনসারদের সংখ্যা জানালেন মহাপরিচালক

এদিকে শিমুল তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী পলাতক আখতারুজ্জামান শাহীন। তার সঙ্গে আনারের হুন্ডি কারবার নিয়ন্ত্রণ ও সীমান্তে স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল। এ ছাড়া শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিরোধ ছিল এমপি আনারের। হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন শিমুল। কলকাতায় হত্যা মিশন শেষ করে গত ১৫ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি।

শিমুলের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, তিনি ছিলেন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) একজন শীর্ষ নেতা; খুলনা, ঝিনাইদহ ও যশোরে সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণকারী। তার এ কাজে বাধা ছিলেন এমপি আনার। এর মধ্যে আখতারুজ্জামান শাহীন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করলে শিমুল তাতে রাজি হয়ে যান ও যৌথভাবে সংসদ সদস্যকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।

জবানবন্দিতে আরও উঠে আসে, নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) প্রধান নেতা ছিলেন ডা. মিজানুর রহমান টুটুল। ২০০৮ সালের জুলাইতে তিনি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। টুটুল শিমুল ভূঁইয়ার আপন বোনের স্বামী এবং আখতারুজ্জামান শাহীনের চাচাতো ভাই।

আরও পড়ুনঃ  শে*খ ফ্যামিলির সবাই চোর!

সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) সঙ্গে যোগাযোগ ছিল আনোয়ারুল আজীম আনারের। তারা ছিলেন টুটুলের বিরোধী পক্ষ। শিমুল ও শাহীনের ধারণা, ওই যোগাযোগের সূত্র ধরেই এমপি আনার টুটুলকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শিমুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে উঠে এসেছে, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তানভীর গত ৬ মে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে কলকাতায় যান। সেখানে সল্টলেক ও নিউ টাউনের মাঝামাঝি এলাকায় ত্রিশিব হোটেলে ওঠেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এমপি আনারকে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এরও আগে ৩০ এপ্রিল কলকাতায় পৌঁছান হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত আখতারুজ্জামান শাহীন। তার সঙ্গে কলকাতায় যান বান্ধবী শিলাস্তি রহমান ও শিমুল ভূঁইয়া। সবাই ওঠেন তার ভাড়া করা ফ্ল্যাটে। শিলাস্তি নিজে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার না করলেও ঘটনার দিন তিনি ওই ফ্ল্যাটেই ছিলেন বলে জবানবন্দিতে বলেন।

আরও পড়ুনঃ  ট্রাক থেকে মালামাল লুট করার সময় ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার

সংসদ সদস্যকে হত্যার আগে কলকাতায় নিউমার্কেট থেকে কেনা হয় পলিথিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসার কথা বলে সংসদ সদস্য আনার কলকাতা যান ১২ মে। সেখানে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। পরদিন তাকে প্রলুব্ধ করে নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাটে নেওয়া হয়। তখন ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিলেন শিলাস্তি, শিমুল, তানভীর, সহযোগী জিহাদ হাওলাদার, সিয়াম হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী। হত্যাকাণ্ডের আগেই আখতারুজ্জামান শাহীন ঢাকায় চলে আসেন।

সঞ্জীবা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাটেই এমপি আনারকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে লাশ টুকরা টুকরা করে গুম করা হয়। তানভীর নিজে সংসদ সদস্যকে বালিশচাপা দেন বলে জবানবন্দিতে স্বীকার করেন।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ