29 C
Dhaka
Thursday, February 20, 2025

কথা বললেই জরিমানা ৫ হাজার, মক্তব ও মসজিদে নিষেধাজ্ঞা

স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অটোরিকশাচালক মইজ উদ্দিনের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে।

সমাজচ্যুত করায় মসজিদে নামাজ পড়া, বাচ্চাদের মক্তবে পড়তে নিষেধসহ কেউ তাদের সঙ্গে কথা বললে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান করা হয়েছে। ফলে গত ২০ দিন ধরে অসহায় এ পরিবারটি অমানবিক জীবনযাপন করছে।

অটোরিকশাচালক মইজ উদ্দিন বলেন, আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াকে ইস্যু করে কয়েকজন মানুষ তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এ অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। জরিমানার ভয়ে আমাদের সঙ্গে কেউ কোনো কথা বলে না, আমার বাচ্চাদের মসজিদে যাওয়া নিষেধ করেছে, আমার গাড়িতে কেউ উঠে না। এ সমাজের কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বললে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার আইন করেছে।

তিনি বলেন, আমার সন্তানদের মক্তবে পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে। আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউ এ সমাজের কারও সঙ্গে কথা বললে আমাদেরও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। আমার অভাব অটনের সংসার। প্রায় সময়ই আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়ে থাকে। পারিবারিক সমস্যা প্রায় প্রতিটি ঘরে। এর চেয়ে জঘন্য ঘটনা সমাজে ঘটে। তাই বলে কাউকে এক ঘরে করে রাখার আইন আছে শুনিনি। আমরা গরিব ও অসহায় বলে এ জুলুম চালানো হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  বাতিল এইচএসসির বাকি পরীক্ষা, ফলাফল কিভাবে হবে?

মইজ উদ্দিন বলেন, আমি খেঁটে খাওয়া মানুষ। একটি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। এ সমাজ যারা চালায়, যারা বিত্তশালী ক্ষমতাবান। না হয় আমাদের অপরাধ থাকলে তারা বিচার করবে কিন্তু একঘরে করার এ জুলুম তারা করতে পারে না। কোরবানির ঈদের আগে তারা আমাদের একঘরে করে দেয়। ঈদের সময় সমাজের কেউ আমাদের কোনো মাংস তারা দেয়নি। এমনকি গরিব বলে সমাজ থেকে যে একটা ভাগ পাই তা থেকেও তারা আমাদের বঞ্চিত করেছে। কলিজা ফেটে যায় এ ঈদে আমি আমার সন্তানদের এক টুকরা মাংস কিনে খাওয়াতে পারিনি।

আরও পড়ুনঃ  ছাত্রলীগের পদ নেওয়াকে কৌশল বললেন ছাত্র*দল নেতা

ভুক্তভোগী অটোরিকশাচালক বলেন, আমার বাবা-মা ঢাকায় থাকে। শুনেছি তাদের ডেকে এনে স্বাক্ষর রেখেছে। সমাজের সবাই নাকি আমাদের একঘরে করার বিষয়ে স্বাক্ষর দিয়েছে। মিজানুর রহমান মিজান নামের একজনের প্ররোচনায় আমার পরিবারকে তারা একঘরে রেখেছে। আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বললে তারা নাকি আমার বিরুদ্ধে মামলা করবে। এ ভয়ে এতদিন আমি কাউকে কিছু বলিনি। আমি এ জুলুমের বিচার চাই। আমি এ অত্যাচারের শাস্তি চাই। কিন্তু কে করবে তাদের বিচার? কে দিবে তাদের শাস্তি? তারাই তো এ সমাজের জমিদার।

আরও পড়ুনঃ  কানাডায় আগের স্বামীর কাছে ইভা, সৌরভকে বাসায় ডেকে ৪ টুকরো

এ বিষয়ে মিজানুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

ছেংগারচর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বোরহান উদ্দিন বলেন, তাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। আমি বলেছি, তাদের অন্যায় থাকলে বিচার করা হবে। কিন্তু সমাজ থেকে বিতাড়িত করার কোনো আইন নেই। আমি তাদের এক মাসের সময় দিয়ে এসেছি। কিন্তু ওই সমাজের লোকজন আমার কথা অমান্য করে এ কাজ করেছে।

মতলব উত্তর থানার ওসি আলমগীর হোসেন রনি বলেন, এটা অমানবিক ঘটনা। তারা অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একি মিত্র চাকমা বলেন, কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে একঘরে করে রাখা আইনবহির্ভূত কাজ। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ