ভারতের মুম্বাইয়ে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্কুটারের পেছনে ধাক্কা দিয়েছে দ্রুতগতির একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি। ধাক্কা দেয়ার পর গাড়িটি স্কুটার আরোহী নারীকে প্রায় ১০০ মিটার পর্যন্ত হেঁচড়ে নিয়ে যায়। এতে ওই নারীর করুণ মৃত্যু হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি পুলিশের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, রবিবার (৭ জুলাই) সকালে মুম্বাই শহরের ওরলি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। স্কুটারে থাকা এক দম্পতিকে আঘাত করে দ্রুতগামী একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি। এতে স্বামী ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হন স্ত্রী। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন মহারাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন দল শিবসেনা (শিন্ডে শিবির) নেতার ছেলে মিহির শাহ। তিনি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে তিনি পালিয়ে যান। তাকে খুঁজছে পুলিশ। তার বাবাকে আটক করেছে পুলিশ। গাড়ির চালককেও আটক করা হয়েছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ওই নারী নাম কাবেরী নাকভা। তার স্বামীর নাম প্রদীক নাকভা। এই দম্পতি ওরলির কোলিওয়াড়া এলাকায় থাকেন। মাছের ব্যবসা করেন। রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তারা মাছ কেনার জন্য স্কুটারে চেপে সাসুন ডকে যান। মাছ কিনে ফেরার পথে পেছন থেকে এসে ধাক্কা দেয় বিএমডব্লিউ। জোর ধাক্কায় স্কুটার আরোহী স্বামী-স্ত্রী ছিটকে গাড়িটির বনেটের ওপর গিয়ে পড়েন। প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে রাস্তায় ঝাঁপ দেন স্বামী। কিন্তু স্ত্রী ঝাপ দিতে পারেননি।
গাড়িটি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করার লক্ষ্যে ওই নারীকে নিয়েই প্রায় ১০০ মিটার পথ হেঁচড়ে নিয়ে যায়। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। দুর্ঘটনার পরই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান চালক। আহত নারীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তার স্বামীর চিকিৎসা চলছে। পুলিশ খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার (৬ জুলাই) রাতে জুহুর একটি পানশালায় মদ্যপান করছিলেন মিহির। ভোররাতে ফেরার সময় চালককে একটু ঘুরিয়ে আনতে বলেন। ওরলির কাছে এসে তিনি গাড়ি চালাতে চেয়ে বায়না ধরেন। চালক ছেড়ে দেন। মিহির গাড়ি চালানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাইকে ধাক্কা দেন। তারপর পালিয়ে যান। এই কাণ্ড ঘটানোর পর বাবা রাজেশ শাহকে ফোন করে বিষয়টি জানান মিহির। তারপর থেকে মিহিরের মোবাইল বন্ধ। পুলিশ তাকে খোঁজ করছে। চালককেও ধরেছে পুলিশ। তাকে ও নেতা রাজেশকে থানায় বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে তদন্তে দেখা গেছে, দুর্ঘটনার পর প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করেন মিহির। গাড়ির কাচে শিবসেনার স্টিকার ছিল। সেটি তুলে ফেলার চেষ্টা করা হয়।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে পুণের রাস্তায় এক বাইক আরোহীকে ধাক্কা দেয় একটি গাড়ি। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৯ বছরের এক তরুণের। অভিযুক্ত ছিলেন এনসিপি বিধায়কের ভাইপো।
এর আগে গত মে মাসে পুণেতেই বাইক আরোহী দুই তরুণ-তরুণীকে পিষে মারে এক পোর্শে গাড়ি। অভিযোগ, গাড়িটি চালাচ্ছিল নাবালক কিশোর। গভীর রাতে পানশালা থেকে ফিরছিল সেই কিশোর। মাতাল ছিল বলেও অভিযোগ। এবার মুম্বাইয়ে শিবসেনা নেতার ছেলের গাড়ি পিষে মারল এক নারীকে।