30 C
Dhaka
Thursday, February 20, 2025

আলোচনায় আন্দোলনকারীদের অভিনব কর্মসূচি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মিছিল-সমাবেশ, মানববন্ধন, অনশন, লংমার্চ, হরতাল, ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেখে আসছেন সাধারণ মানুষ। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে একের পর এক ভিন্নতর কর্মসূচি দিয়ে আলোচনায় থেকেছে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পেয়েছে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের সমর্থন।

আন্দোলনকারীদের এমন অভিনব সব কর্মসূচি আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে বিভিন্ন মহলে। বাংলা ব্লকেড, গণপদযাত্রা, কমপ্লিট শাটডাউন, মার্চ ফর জাস্টিস, রিমেম্বারিং আওয়ার হিরো’স। সর্বশেষ গতকাল প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ কালবেলাকে বলেন, বেশিরভাগ ব্যতিক্রম কর্মসূচি। মূলত বিভিন্ন মতের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে যুক্ত রয়েছেন। তা ছাড়া শিক্ষিত ও মেধাবীরা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা কর্মসূচির নামে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। এমন ব্যতিক্রম যে, আগে এসব নাম কেউ শোনেনি। একদিকে ছাত্রদের ক্রিয়েটিভিটি ছিল। অন্যদিকে হিংস্রতা বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সে কারণে এসব কর্মসূচি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মাঠে নামেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুরুর দিকে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে মিছিল-মিটিং এবং সমাবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও গত ৭ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। কয়েক দফা বিরতি দিয়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

আরও পড়ুনঃ  হাইতিতে কালোজাদুতে সন্তানের মৃত্যুতে ১৮০ জনের প্রাণ নিলেন গ্যাংস্টার বাবা

এরপর গত ১৪ জুলাই সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটা সংস্কারের দাবিতে গণপদযাত্রা নিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করে। একই সঙ্গে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক বরাবর ওই স্মারকলিপি দেন। এরপর ১৬ জুলাই সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পাল্টাপাল্টি হামলা ও গুলিবর্ষণে ওই দিনই নিহত হন ৬ জন। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা নাড়া ফেলে দেশের অনেক মানুষের মধ্যে। এরপর শিক্ষার্থীদের সে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।

এমন অবস্থায় ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও একদফা দাবিতে সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন পালিত হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ কর্মসূচি ঘোষণার সময় বলেন, শুধু হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না, অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না। ওই কর্মসূচিও দেশব্যাপী সাড়া ফেলে। এর পরের কয়েক দিনে সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ৩১ জুলাই দুপুর পর্যন্ত এই সহিংসতায় দুই শতাধিক নিহত হয়েছেন। পুরো ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে দেশের বাইরেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীরা ৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এক পর্যায়ে গত ৩১ জুলাই ঘোষণা করা হয় পরের দিন পালিত হবে মার্চ ফর জাস্টিস।

আরও পড়ুনঃ  অন*লাইনে রেজার অর্ডার দিয়ে পেলেন শসা ছিলার মেশিন: তরুণীর ক্ষোভ।

এই কর্মসূচি মোতাবেক সারা দেশে গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা, গুম-খুনের প্রতিবাদে এবং জাতিসংঘ কর্তৃক তদন্তপূর্বক বিচারের দাবিতে, ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে এ কর্মসূচি পালিত হয় বলে জানান কোটা আন্দোলনকারীরা। এরপর ১ আগস্ট ঘোষণা করা হয় রিমেম্বারিং আওয়ার হিরো’স কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আলোকে সারা দেশে গতকাল গত কয়েকদিনে নিহতদের স্মরণ এবং নানা সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালিত হয়। সর্বশেষ গতকাল ঘোষণা করা হয় প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল। এতে বলা হয়, মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহীদদের কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন ও জুমার নামাজ শেষে ছাত্র-জনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ কর্মসূচিতে ভিন্নতা আনার বিষয়ে কালবেলাকে বলেন, আমরা কয়েকদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু প্রশাসন তেমন গুরুত্ব দেয়নি। সে কারণে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একদিন টিএসসিতে সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়করা বসলাম। সেই আলোচনায় কয়েকজন অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানাল। কিন্তু এগুলো অনেক পুরোনো এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি হওয়ায় সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়নি। তখন আমাদের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ‘বিডি ব্লকেড’ কর্মসূচির প্রস্তাব দেয়। তখন এটি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হয়। বিডি ব্লক বা বিডি ব্লকেড কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর বিডি ব্লকেড থেকে সেটি হয়ে যায় বাংলা ব্লকেড। সেটি সব স্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এর পরে বিভিন্ন টকশোতে কর্মসূচির নামের বিষয়ে আমাদের প্রশ্ন করা হতো। তখন আমরাও উপলব্ধি করলাম, নাম একটা ফ্যাক্ট।

আরও পড়ুনঃ  নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে সংঘর্ষের মাঝে পড়ে সাইমুন, এরপর...

তিনি বলেন, এর পর থেকে আমরা ইউনিক কর্মসূচি দেওয়ার চেষ্টা করলাম। যাতে কর্মসূচি নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিকে কোনো ব্লেম না আসে। বাংলা ব্লকেড কয়েক ধাপে পালনের পর আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ নিয়ে একইভাবে টিএসসিতে আলোচনা হয়। তখন সবাই শিক্ষকদের আন্দোলন গতি না পাওয়ার কারণ খুঁজতে থাকে। তাতে বেরিয়ে আসে যে, শিক্ষকরা এক ধরনের আন্দোলন দিনের পর দিন করে যাচ্ছেন। সেজন্য সাড়া পাচ্ছেন না। এ ছাড়া এটি এপিসোডিকও ছিল না। সেটি বুঝতে পেরে সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়করা হোল শাটডাউন, টোটাল শাটডাউন ও কমপ্লিট শাটডাউনের মতো বেশ কয়েকটি নাম প্রস্তাব করে। এরপর সর্বসম্মতিক্রমে কমপ্লিট শাটডাউন নামটি চূড়ান্ত হয়। তিনি বলেন, মার্চ ফর জাস্টিস ও রিমেম্বারিং আওয়ার হিরো’স কর্মসূচির সময় আমরা ডিবি হেফাজতে ছিলাম। সে কারণে ভালো করে জানি না। তবে যারা এ সময় বাইরে ছিলেন তারা আলোচনা করেই এসব কর্মসূচি দিয়েছেন।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ