30 C
Dhaka
Saturday, April 19, 2025

১৩টি পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদককে শোকজ

ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত ১৩টি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদককে লাগাতার একই দিনে একই নিউজ একই আঙিকে ছাপিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করার অপরাধে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকদের নামে নোটিশ জারি করা হয়।

চলতি বছরের ৩০ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে সাতদিনের ভিন্ন ভিন্ন পত্রিকায় একই সংবাদ একই শিরোনামে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়। ভিন্ন ভিন্ন সংবাদপত্রে ভিন্ন ভিন্ন সম্পাদক ও প্রকাশক একই সংবাদ, একই আঙ্গিকে, একই তারিখে প্রকাশ করা কেন অবৈধ হবে না তার যথাযথ কারণ ও প্রমাণাদিসহ পত্র প্রাপ্তির ৫ (পাঁচ) কার্যদিবসের মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবীবা মীরার কাছে ব্যাখ্যাসহ জবাব দাখিল করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। না হলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

নোটিশ প্রাপ্ত পত্রিকাগুলো হলো, মো. শামসুল আলম খান সম্পাদিত দৈনিক আজকের ময়মনসিংহ, এফ এম এ ছালাম সম্পাদিত দৈনিক দেশের খবর, এন বি এম ইব্রাহীম খলিল রহিম সম্পাদিত দৈনিক বিশ্বের মুখপাত্র, মরহুম আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার সম্পাদিত দৈনিক ঈষিকা, নাসির উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত দৈনিক অদম্য বাংলা, মো. আফসার উদ্দিন সম্পাদিত দৈনিক সবুজ, আ ন ম ফারুক সম্পাদিত দৈনিক আলোকিত ময়মনসিংহ ও দৈনিক দিগন্ত বাংলা, শেখ মেহেদী হাসান নাদিম প্রকাশিত দৈনিক জাহান, ওমর ফারুক সম্পাদিত দৈনিক কিষানের দেশ, এম এ মতিন সম্পাদিত দৈনিক নিউ টাইমস, ফরিদা ইয়াসমীন রত্না সম্পাদিত হৃদয়ে বাংলাদেশ, বিকাশ রায় অ্যাডভোকেট সম্পাদিত সাপ্তাহিক পরিধি।

আরও পড়ুনঃ  যেভাবে হত্যা করা হলো আকরাম হোসেনকে

উল্লেখ, ১৩টি পত্রিকা ভিন্ন ভিন্ন প্রেসের নামে ডিক্লারেশন নিলেও স্থানীয়ভাবে একই প্রেসে মুদ্রিত হয়। যে কারণে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পৃষ্ঠার ছাপা হুবহু মিল রয়েছে। দিনের পর দিন এভাবেই পত্রিকাগুলো প্রকাশিত হয়ে আসছে।

এছাড়া দৈনিক জাহান প্রকাশক শেখ মেহেদী হাসান নাদিমের বিরুদ্ধে নিজ পত্রিকার অঙ্গনে অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি বিক্রয় ও মাদক কারবারের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে এবং তিনি একাধিকবার অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়ে জেলে খেটেছেন।

এদিকে মো. শামসুল আলম খান সম্পাদিত ‘দৈনিক আজকের ময়মনসিংহ’ পত্রিকাটি সোনালি প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, ইডেন কমপ্লেক্স, মতিঝিল ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত হওয়ার কথা প্রিন্টার্স লাইনে থাকলেও পত্রিকা ময়মনসিংহের একটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। তিনি মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের দায়ে মানহানির মামলায় অর্থদণ্ডে দণ্ডিত এবং ওই মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলেও জানা যায়।

আরও পড়ুনঃ  আন্দোলনের সময় ছাত্রদের সঙ্গে কুকর্ম করেছিলেন সেই ঊর্মি

সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহ ও ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, একই শিরোনাম কয়েকটি পত্রিকায় একাধারে একই বিষয় নিয়ে প্রকাশিত হবে- এটা সংবাদপত্রের মূলনীতি পরিপন্থি। সংবাদপত্রের মাধ্যমে মানুষ সঠিক তথ্য পাবে। পত্রিকাগুলো অবশ্যই নিয়মের মধ্যে আসা উচিত। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি তারা যেন ন্যায় বিচার পায়।

দৈনিক আলোকিত ময়মনসিংহ ও দৈনিক দিগন্ত বাংলার সম্পাদক আ ন ম ফারুক বলেন, কম্পিউটারে যারা কাজ করে তাদের ভুলের কারণে এমন হয়েছে। আমরা এই বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখতেছি। পরে এমন ভুল যাতে আর না হয়। ভবিষ্যতে যাতে এরকম ঘটনা না ঘটে এ বিষয়ে তারা সতর্ক থাকবেন।

আজকের বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক জানান, একই শিরোনামের সংবাদ একই ছাপাখানা থেকে একাধিক পত্রিকায় একাধারে কয়েকদিন প্রকাশিত হবে এটা পাবলিকেশন অ্যাক্ট পরিপন্থি। সংবাদপত্রের মান ধরে রাখতে এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত। এর আগেও এই সমস্যাগুলো নিয়ে সম্পাদকদের মধ্যে কথা হয়েছে, কিন্তু জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের নোটিশ কখনও তারা পাননি।

আরও পড়ুনঃ  ‘মা আমাকে বাচাঁও, আমার জীবন ভিক্ষা দাও’

জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা মীরা কালবেলাকে বলেন, একই শিরোনামে একাধিক পত্রিকায় একাধারে ছাপা হওয়ার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর পত্রিকার সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। ওই পত্রিকাগুলোর সম্পাদক ভিন্ন, অফিসের ঠিকানা ভিন্ন ও পত্রিকার কালারও ভিন্ন। অথচ দ্বিতীয় পৃষ্ঠা ও তৃতীয় পৃষ্ঠার পুরো জায়গাজুড়ে বিনোদন, স্বাস্থ্য ও ধর্মসহ সব ধরনের অসংখ্য রিপোর্ট হুবহু ছাপানো হয়েছে। সম্পাদকীয় লেখাটাও হুবুহু ছাপানো হয়েছে। এছাড়া ওইসব রিপোর্টগুলোর শিরোনামের কালারেও কোনো ধরনের ভিন্নতা নেই। যা ছাপাখানা আইন ও কপিরাইট আইনে কিছু বাধা আছে।

তিনি বলেন, হয় তো পত্রিকার সম্পাদকরা এই আইন সম্পর্কে জানেন না। অথবা জেনেও সবাই একসঙ্গে সহজভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করার জন্য কপি রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। ভবিষ্যতে আর যেন এমন কপি রিপোর্ট প্রকাশ না করা হয়, সেজন্য পত্রিকার সম্পাদকদের সতর্ক করতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ