29 C
Dhaka
Thursday, February 20, 2025

তওবা করে পরিশুদ্ধ হওয়ার আগে ছাত্রলীগের বিচার হোক : আরিফ আজাদ

১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে হত্যা, নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িত থাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে নিষিদ্ধ করা হয়।

নিষিদ্ধের বিষয়টিকে প্রতিহিংসা বিবেচনা না করে আল্লাহর কাছে তওবা ও পরিশুদ্ধির সুযোগ হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান। তার আহ্বানের পর বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন জনপ্রিয় ইসলামী লেখক আরিফ আজাদ। বিস্তারিত এক পোস্টে তওবার মাধ্যমে ছাত্রলীগের ক্ষমা ও বিচার নিশ্চিতের কথা বলেছেন।

পাঠকের জন্য তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

পোস্টে তিনি লিখেছেন, আমি কি চাই আওয়ামিলীগ-ছাত্রলীগ তওবা করে ভালো হয়ে যাক? আমার অবস্থানটা বোঝার সুবিধার্থে শুরুতেই আমি আপনাদের একটা হাদিস শোনাতে চাই। হাদিসটা বর্ণনা করেছেন বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু নামের একজন সাহাবি।

গামিদ গোত্রের একজন মহিলা নবীজি সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললো, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমি তো জেনা করে ফেলেছি। আমি আশা করছি যে, আপনি আমাকে এই পাপ হতে পবিত্র করবেন’। নবীজি বলেন, ‘তুমি ফিরে যাও’।

মহিলা পরের দিনও আসে। এসে একই কথা বলে এবং বলে যে—আমি গর্ভবতী। নবিজি তাকে সেদিনও ফিরে যেতে বলেন এবং মানা করে দেন যে, সন্তান প্রসবের আগে যেন সে আর নবিজির কাছে না আসে।

সন্তান প্রসবের পর মহিলা আবার এলো। এসে একই কথা বললো—আমি যিনা করেছি, আমাকে পবিত্র করুন। আল্লাহর রাসুল তাকে সেদিনও চলে যেতে বলেন, এবং নিষেধ করেন যে—সন্তান বুকের দুধ ছাড়ার আগ পর্যন্ত যেন সে আর না আসে।

আরও পড়ুনঃ  ইউপি চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করে বাড়িছাড়া স্বামী

সন্তান দুধ ছাড়ার পর মহিলা সন্তানকে সাথে নিয়ে পুনরায় নবিজির কাছে আসলো। এবার নবিজি সেই সন্তানকে অন্য একজন সাহাবির হাতে সোপর্দ করে, জেনার শাস্তি হিশেবে মহিলাকে পাথর মেরে হত্যার হুকুম দিলেন।

সেদিনের ঘটনায় সেই মহিলাকে যারা পাথর নিক্ষেপে শাস্তি দিয়েছে, তাদের মধ্যে খালিদ ইবন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুও ছিলেন। তিনি এমনজোরে একটা পাথর ছুঁড়ে মারলেন যে, মহিলার শরীরের রক্ত ফিনকি দিয়ে ছুটে এসে তা খালিদ ইবন ওয়ালিদের গালে লাগে। এতে তিনি খুবই ক্রোধান্বিত হোন আর মহিলাকে নিয়ে বেশ তীর্যক মন্তব্য করেন।

এই তীর্যক মন্তব্য আল্লাহর রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কানে লাগে এবং তিনি সাথে সাথে খালিদ ইবন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘খালিদ, থামো! সেই সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ। এই মহিলা এমন তাওবা করেছে যে, যদি কোনো জালিমও এরকম তাওবা করতো, তার গুনাহও মাফ হয়ে যেতো’।

আরিফ আজাদ বলেন, হাদিসের এই ঘটনায় দেখুন। উক্ত মহিলা কিন্তু তওবা করেছে, কিন্তু আল্লাহর রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাস্তি দেওয়া মওকূপ করে দেননি। মহিলার তওবা এতো বিশুদ্ধ ছিল যে, আল্লাহর রাসুলের ভাষায়—কোনো জালিমও যদি এমন তওবা করে, তার গুনাহও মাফ হয়ে যাবে।এতো সুন্দর, এতো বিশুদ্ধ তাওবা, কিন্তু মহিলাকে কি শাস্তি প্রদান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে?

ইসলামের সৌন্দর্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্যের জায়গা হচ্ছে অপরাধের বিপরীতে ইসলাম যেভাবে শাস্তির বিষয়টাকে হাইলাইট করে, সেটা। অপরাধ প্রমাণ হলে এবং তা যদি সমাজের বৃহত্তর শৃঙ্খলা, শান্তি আর সমন্বয় বিনষ্টের কারণ হয়, তাহলে ইসলাম বেশ কঠিনভাবে সেটার মোকাবিলা করে। নবিজির বিখ্যাত হাদিসে আমরা পাই—‘আমার কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করতো, আমি তারও হাত কেটে দিতাম’।

আরও পড়ুনঃ  যশোরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় গুলি করে যুবলীগ কর্মী হত্যা

হাদিসের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আওয়ামিলীগ আর ছাত্রলীগ এই তল্লাটে আমাদের জীবনটাকে জাহান্নাম বানিয়ে ছেড়েছে। হেন কোনো জুলুম নেই, হেন কোনো অপরাধ নেই যা তাদের দ্বারা সংঘটিত হয়নি। মানুষ রাতের বেলা শান্তিতে ঘুমোতে পারেনি, নির্বিঘ্নে চলতে পারেনি, মন খুলে কথা বলতে পারেনি। কতো ছোট ছোট ছেলেমেয়ে তাদের বাবাকে হারিয়েছে এই জুলুমের কারণে। মেঘনা আর শীতলক্ষায় ভেসে গেছে কতো বাবা আর ভাইয়ের মৃতদেহ। আয়নাঘরে কতো নির্মম নির্যাতন অত্যাচারে কেটেছে কতো কতো মানুষের দিন।

মুখে দাড়ি থাকলে সন্দেহ, টুপি থাকলে সন্দেহ। নামাজ পড়লে সন্দেহ। সুদ আর ঘুষ না খেলে সন্দেহ। বিরোধিমতের রাজনীতি করলে ধরে মেরে ফেলা হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহ, ২৮ ই অক্টোবর, ৫ ই মে, ১৭ থেকে চার-ই জুলাই—কতো কতো তাজা তাজা প্রাণ, আহা!

তিনি বলেন, আমি অবশ্যই চাই যে তারা তওবা করুক, কিন্তু অপরাধের শাস্তি থেকে অপরাধীরা একচুল ছাড় পাক, সেটা আমি কোনোভাবেই চাই না। তারা যে অপরাধ এতোদিন করে এসেছে, প্রত্যেকটার, ধরে ধরে বিচার করা হোক, যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক—আমাদের শহিদ হওয়া মানুষগুলোর জন্য, আমাদের সমাজে শান্তি আর শৃঙ্খলার জন্য।

১৫ থেকে ৫ ই আগষ্টের এতো এতো মানুষের প্রাণ যাদের মাঝে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা জাগাতে পারেনি, আমাদের তাওবার উদাত্ত আহ্বানেও তারা বদলাবে না, এটা সহজে অনুমেয়। তবু আমরা তওবার কথা বলবো, কিন্তু আমাদের স্বর উঁচু করা চাই অপরাধীর বিচারের বিষয়ে।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাইডেনকে যা বললেন মোদি

ছাত্রলীগের অপরাধ নিশ্চিত না হলে আরও অনেকে অপরাধের সুযোগ পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই সকল অপরাধের যদি আমরা যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে না পারি, ধরে রাখুন, আরো অনেক ক্ষুধার্ত জালিমের লোলুপ থাবা আমাদের দিকে ধেঁয়ে আসবে।

ছাত্রলীগের সবাই সমান অপরাধী না জানিয়ে তিনি বলেন,আপনি আমাকে বলতে পারেন, আওয়ামিলীগ আর ছাত্রলীগের সবাই কি জালিম? সবার অপরাধের মাত্রা কি সমান? না, সবার অপরাধের মাত্রা সমান নয়। তাই শাস্তিও সকলের সমান হবে না। তবে, তাদের সবাই ‘জালিম’ কী না সেই উত্তরটা ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহর জীবন থেকেই শুনুন।

ইমাম আহমাদ রহ.-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় একবার এক কারারক্ষী ইমাম আহমাদকে জিগ্যেস করে, ‘ও আবু আবদুল্লাহ, যালিম এবং তাদের সহযোগিদের ব্যাপারে যে হাদিস আছে, সেটা কি সহিহ?’ ইমাম আহমাদ বললেন, ‘হ্যাঁ’। কারারক্ষী আবার জিগ্যেস করলো, ‘তাহলে, আমি কি যালিমের সহযোগি হিশেবে গণ্য হবো?’ ইমাম আহমাদ জবাবে বললেন, ‘না। যালিমের সহযোগি তো তারা যারা তাদের চুল আঁচড়ে দেয়, তাদের কাপড় ধুয়ে দেয়, তাদের খাবারদাবার তৈরি করে। তুমি যালিমের সহযোগি নও, বরং তুমি নিজেই একটা যালিম’।

মানুষের ইনসাফ দেখার প্রত্যাশা পূরণ হোক উল্লেখ করে এই লেখক বলেন, আওয়ামিলীগ আর ছাত্রলীগ তওবা করে পরিশুদ্ধ হোক৷ তবে, তার আগে তাদের কৃত অপরাধের যথাযথ বিচার হোক। এই জমিন ইনসাফ দেখুক।

সবশেষে তিনি বলেন, আমাদের ভাইদের রক্তের গন্ধ এখনো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। রায়েরবাগের গণকবর এখনো কাঁচা। আমরা যেন আমাদের ভাইদের হন্তারকদের দায়মুক্তির পত্র রচনা করে না ফেলি।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ