28 C
Dhaka
Sunday, October 19, 2025

বাংলাদেশি পর্যটক ছাড়া ধুঁকছে কল*কাতার অর্থনীতি

হাতে না মেরে ভাতে মারা। বাস্তবে সেটাই যেন ঘটছে কলকাতার নিউ মার্কেট চত্বরে। আগে সারা বছরই বাংলাদেশি পর্যটক, রোগীরা ভিড় জমাত কলকাতায়। তবে গত পাঁচ আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন ও ঢাকা ছেড়ে দিল্লি পালানোর পর বদলে গেছে ছবিটা।

দুই দেশের মধ্যে শুরু হওয়া কূটনৈতিক টানাপোড়েনে ভুগছে পশ্চিমবাংলার রাজধানী শহর। কারণ এখানেই বাংলাদেশের বহু মানুষ আসেন কেনাকাটা করতে কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে। মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট, মার্কুইস স্ট্রিট, মির্জা গালিব স্ট্রিট, হাজী মুহাম্মদ মহসিন স্কোয়ার এলাকা গমগমে থাকে বাংলাদেশি নাগরিকদের আনাগোনা ও আলাপচারিতায়।

মেহেন্দি দেওয়া চুল-দাড়িসহ পুরুষ, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজে হিজাবধারী নারীদের ভিড় যেখা যায় এই চত্বরে। কিন্তু কারও পৌষ মাস তো কারও সর্বনাশ। বাংলাদেশ যখন স্বৈরাচারী শাসনের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে তখন নিউ মার্কেটের বড় বড় কাপড়ের দোকানি, রেস্তোরাঁ, হোটেল মালিকরা হাহুতাশ করছেন।

আরও পড়ুনঃ  নুরুল হক নুর কি অন্য দলে যাচ্ছেন? কী বলছেন রাশেদ খান

অনেককেই দেখা যাচ্ছে কাস্টমারের অভাবে মাছি তাড়াচ্ছেন। বাংলাদেশের ক্রেতারাই ছিল তাদের ব্যবসার মূল ভরসা। ক্ষেত্র বিশেষে মেডিকেল ভিসা ছাড়া কোনো ভিসা পাচ্ছেন না বাংলাদেশিরা।

তাছাড়া কলকাতার একাধিক মিডিয়ায় যেভাবে বাংলাদেশ বিরোধী প্রপাগান্ডা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে তাতে সে দেশের মানুষ এখানে পা রাখতেই ভয় পাচ্ছে। দুই দেশের নেটিজেনরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বাকযুদ্ধ করছে সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে। কিন্তু কলকাতার কেন্দ্রবিন্দু নিউ মার্কেটে বাংলাদেশিরা না এসে হাতে না, এভাবেই ভাতে মারছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।

এর ফলে ভ্রমণ ও হোটেল ব‌্যবসা জোরে ধাক্কা খেয়েছে। একের পর এক বাসের বুকিং বাতিল করতে হয়েছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তগুলোতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

নিউ মার্কেট এলাকায় হোটেল ও ট্যুর-ট্রাভেলস কোম্পানি মালিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ তাই দিনকে দিন আরও চওড়া হচ্ছে। এখানকার হোটেল, পরিবহন ব‌্যবসা পুরোটাই বাংলাদেশি রোগী ও পর্যটকদের উপরই নির্ভর করে চলে।

আরও পড়ুনঃ  রূপগঞ্জে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১৮

সদর স্ট্রিটে বেঙ্গল ট্রাভেল সার্ভিস-এর প্রোপ্রাইটার মুহম্মদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশিদের উপর নির্ভর করে চলে আমাদের ব‌্যবসা। এখন টিকিট বুকিং কমে গেছে। অনেকে অগ্রিম বুকিং করেও বাতিল করে দিয়েছে। প্রায় ৬০ শতাংশ ব‌্যবসা মার খেয়েছে। পর্যটক বুকিং তো একদমই নেই। এখন কতদিন এই পরিস্থিতি চলবে জানি না। ততদিনে ব‌্যবসার ব‌্যাপক ক্ষতি হবে।

শ্যামলী পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেডের অবনী কুমার ঘোষ বলেন, ঢাকা, পাবনা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং অন্যান্য জায়গা থেকে লোকজন ফোন করে আমাদের জিজ্ঞাসা করছে যে আমরা তাদের জন্য ভিসার ব্যবস্থা করতে পারব কি না। শ্যামলী পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেড ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে বাস সার্ভিস চালায়। তিনি জানাচ্ছেন, তারা ভিসার জন্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা (ভারতীয় মুদ্রায়) দিতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুনঃ  বিদেশ যাওয়ার অনুমতি নিতে ৪০০ কোটি টাকা দিলেন ব্যবসায়ী

উল্লেখ্য, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের অনেকেই পালিয়ে ভারতে আসার জন্য ভিসা করানোর চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমরা তাদের বলেছি, এটা আমাদের হাতে নেই। কিছু করাও সম্ভব নয়।

কেউ কেউ বলছেন, পর্যাপ্ত বুকিং না থাকায় তারা ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসের সংখ্যা কমাতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যরা বলছেন, যাত্রী সংখ্যা ৬০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। বাড়ছে লোকসান।

কয়েক মাস আগে, কলকাতা থেকে ঢাকাগামী একটি ৪৫ আসনের বাস প্রায় পূর্ণ হয়ে যেত। এখন অর্ধেক আসনও পূরণ হয় না। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বাস রুটে কলকাতা আসতে পছন্দ করেন। কারণ এটি ফ্লাইটের তুলনায় সস্তা।

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ