22 C
Dhaka
Thursday, February 20, 2025

গাজায় যু*দ্ধবিরতির পর ‘উভয় সংকটে’ নেতানিয়াহু

গাজায় যুদ্ধবিরতির পর আক্ষরিক অর্থেই ‘উভয় সংকটে’ পড়েছেন ইসরায়েরের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং নিজের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার— উভয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে প্রায় নাজেহাল অবস্থায় আছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

কারণএকদিকে বিরতির ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন থেকে ব্যাপক চাপ রয়েছে তার ওপর, অন্যদিকে তার নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের একাধিক কট্টরপন্থি শরিক দল পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, গাজায় ফের সামরিক অভিযান শুরু না হলে সরকার থেকে সরে যাবেন তারা।

ইতোমধ্যে দেশটি পুলিশ বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভির তার রাজনৈতিক দল জিউইশ পাওয়ার পার্টিসহ সরে গেছেন জোট সরকার থেকে। গত ১৯ জানুয়ারি বিরতির প্রথম দিনই সরকার থেকে বিদায় নিয়েছেন বেন-গিভির।

বিজ্ঞাপন

আর দেশটির অপর কট্টরপন্থি নেতা ও বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী বেজালের স্মোতরিচ জানিয়েছেন, বিরতির প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার পর যদি গাজায় সামরিক অভিযান শুরু না হয়, তাহলে তিনিও তার দলসহ জোট ছেড়ে দেবেন।

যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েলের সম্প্রচার সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্মোতরিচ বলেন, “আমাদের এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন স্টাইলে এগোনো উচিত। আমাদের এখন প্রয়োজন গাজা দখল করা, অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও সেখানে সামরিক আইন জারি করা, ফিলিস্তিনিদের অন্য কোনো দেশে স্থানান্তর হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা এবং সর্বোপরি নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করা।”

আরও পড়ুনঃ  অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে যা বললো জাতিসংঘ

বিজ্ঞাপন

এদিকে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ বুধবার জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির ব্যাপারটিতে তিন সর্বোচ্চ মনযোগ দিচ্ছেন এবং এই বিরতিকে অবশ্যই ১ম থেকে ২য় স্তর এবং তার পর তৃতীয় বা শেষ স্তরে পৌঁছাতে হবে এবং গাজা থেকে নিজেদের সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতেই হবে।

ইসরায়েলের থিংকট্যাংক সংস্থা শালম হার্তমান ইনস্টিটিউটের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমোৎজ আসা-এল রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন ও কট্টর জোটসঙ্গীদের পরস্পরবিরোধী চাপে বর্তমানে চিঁড়েচ্যাপ্টা অবস্থায় রয়েছেন নেতানিয়াহু। তার নেতৃত্বাধীন জোট সরকার বর্তমানে ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছেছে এবং যে কোনো সময়ে তা ভেঙে পড়তে পারে।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের অতর্কিত হামলার জবাবে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রায় ১৫ মাস ধরে অভিযান-সংঘাত চলার পর অবশেষে সেখানে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস এবং ইসরায়েল।

কী কী ধারা রয়েছে এ চুক্তিতে

গত বেশ কয়েক মাস ধরে হামাস, ইসরায়েল এবং মধ্যস্থতাকারী তিন দেশ মিসর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের যুদ্ধবিরতির চুক্তির খসড়া আদান-প্রদান হয়েছে। বিভিন্ন সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধনের পর চূড়ান্ত যে চুক্তির ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে হামাস এবং ইসরায়েল।

আরও পড়ুনঃ  ছাত্রলীগের আবরণে নতুন দল, জানা গেল দায়িত্বশীলদের নাম

প্রথম স্তর

প্রথম স্তর বা পর্যায়ের মেয়াদ হবে ৬ সপ্তাহ বা ৪২ দিন। এই মেয়াদে গাজায় হামলা-সংঘাত সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে এবং নিজেদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে মুক্তি দেবে হামাস। এই জিম্মিদের মধ্যে নারী, বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।

প্রথম পর্যায়ে কতজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে— সে সম্পর্কে বাইডেন সুনির্দিষ্টভাবে কিছু না বললেও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস।

এছাড়া যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে গাজার জনবসতিপূর্ণ সব এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে ইসরায়েল এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যেতে পারবেন।

প্রথম স্তরের ৬ সপ্তাহে অন্তত ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে বলেও গতকালের ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।

যুদ্ধ বিরতির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় কবে থেকে শুরু হবে— সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে বিরতির প্রথম স্তর শেষ হওয়ার আগেই। এ চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি নেতা বিবিসিকে জানিয়েছেন, বিরতির ১৬তম দিন থেকে এ বিষয়ক আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  খাগড়াছড়িতে গুজব ছড়িয়ে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা

চুক্তির শর্ত অনুসারে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় কবে থেকে শুরু হবে— এ সংক্রান্ত মিমাংসা হওয়ার আগ পর্যন্ত বিরতের প্রথম পর্যায় চলবে।

দ্বিতীয় পর্যায়

বিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ শেষ হবে গাজায়। প্রথম পর্যায়ের জিম্মিদের মুক্তির পর অবশিষ্টদের মুক্তি দেওয়া হবে দ্বিতীয় পর্যায়ে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১ হাজার জনকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। এই ১ হাজার কয়েদির মধ্যে এমন বন্দি রয়েছেন অন্তত ১৯০ জন, যারা ১৫ বছর বা তার তারও বেশি সময় কারাবাসের সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

তবে যেসব ফিলিস্তিনি কারাবন্দির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ রয়েছে, তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হবে না বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন ইসরায়েলের এক সরকারি কর্মকর্তা

এই স্তরে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হবে বলে জানা গেছে।

তৃতীয় পর্যায়

সব ইসরায়েলি জিম্মি এবং এক হাজার ফিলিস্তিনি কারাবন্দির মুক্তির পর শুরু হবে চুক্তির তৃতীয় পর্ব। এ পর্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকাকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো ফের নির্মাণ করা হবে। এই স্তর আগামী কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হবে।

সূত্র : রয়টার্স

আপনার মতামত লিখুন:
সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ