‘আমার ছেলের কোনো অপরাধ ছিল না। গুলিবিদ্ধ একটা ব্যক্তিকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় সে। বিষয়টি দেখে ওই হাসপাতাল থেকে আমার ছেলেকে পুলিশ টেনে বের করে নিয়ে বুকে গুলি করে মেরে ফেলে।’- কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন যাত্রাবাড়ীর অনাবিল হাসপাতালের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া ইফাত হাসানের (১৬) মা কামরুন নাহার।
গত শনিবার (২০ জুলাই) ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ইফাত হাসান। পরিবারের অভিযোগ, ইফাতকে হাসপাতাল থেকে জোর করে টেনে এনে গুলি করে পুলিশ।
ইফাত হাসান নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের মনপুরা গ্রামের ব্যাংকার রবিউল আমান ও কামরুন নাহার দম্পতির ছেলে। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে ইফাত ছিল দ্বিতীয়। ইফাত পড়তেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার এ কে হাইস্কুলের নবম শ্রেণিতে। আর বড় বোন উম্মে সালমা ইফতি পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঘরে রয়েছে ৪ বছরের আরেক ছোট বোন তাজরিয়ান।
ইফাতের মা জানান, তার স্বামী উত্তরা ব্যাংকে চাকরি করতেন। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি মারা যান। স্বামীর চাকরির সুবাদে পরিবার নিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতেন। স্বামী মারা গেলেও শুধুমাত্র একমাত্র ছেলে ইফাত ও মেয়ে ইফতির পড়ার সুবাদে তিনি ঢাকায় থেকে যান।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত ইফাতের মা বলেন, ‘আমার ছেলে অনেকবার পুলিশকে বলেছে, আঙ্কেল এই এলাকায় জীবনেও আসবো না, আমাকে ছেড়ে দেন, কিন্তু পুলিশ শোনেনি। তারা আমার ছেলেকে মেরে রাস্তায় ফেলে চলে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শনিবার দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে ঘুম ভাঙে ইফাতের। হাতমুখ ধুয়ে দুপুরে বাসার বাহিরে যেতে তৈরি হতে দেখে ইফাতকে বাইরে যেতে নিষেধ করি। কিন্তু একটু পরেই চলে আসবে বলে বেরিয়ে যায় ইফাত। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ইফাতের কয়েকজন বন্ধু তার মরদেহ বাসায় নিয়ে আসেন।
ইফাতের বন্ধুদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সেদিন সে বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে যাত্রাবাড়ী ফুটওভার ব্রিজের কাছে গিয়ে দেখে এক ব্যক্তি পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তখন তাকে উদ্ধারে আশেপাশের কেউ এগিয়ে আসছিল না। তাই ইফাত এগিয়ে গিয়ে ওই লোককে টেনে পার্শ্ববর্তী অনাবিল হাসপাতালে নিয়ে যান। বিষয়টি পুলিশ দেখতে পেয়ে ওই হাসপাতালে গিয়ে ইফাতকে টেনে বাইরে নিয়ে যায়।
এরপর তার বুকের বাম পাশে একটি গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে ইফাত মারা যায়। রাস্তায় তার মরদেহ পড়ে থাকে। পরে এলাকার লোকজন ও ছেলের বন্ধুরা তার মরদেহ বাসায় নিয়ে আসে। যারা ইফাতের মরদেহ বাসায় নিয়ে আসছিল তারাই বলেছে, ইফাত অনেকবার পুলিশকে বলেছে, আঙ্কেল এই এলাকায় জীবনেও আসবো না, আমাকে ছেড়ে দেন, কিন্তু পুলিশ শোনেনি।
তিনি বলেন, আমার ছেলের কোনো অপরাধ ছিল না। একটা অসহায় মানুষকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়াই কি তার অপরাধ? এ কারণেই আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে?